মনসবদারী ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা মনসবদারী ব্যবস্থা কি


মনসবদারী ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।




"অথবা"
 মনসবদারি প্রথার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।


 মনসবদারি ব্যবস্থা :-

 'মনসব' শব্দের অর্থ পদমর্যাদা। যিনি এই পদে অধিকারী ছিলেন তাঁকে বলা হতো মনসবদার। মুঘল সম্রাট আকবর পার সম্রাটদের অনুকরণে মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করেন। তবে মনসবদারি ব্যবস্ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের ভারতে আকবরের সামনে কিছু সমস্যা ছিল। যেমন-
• এই প্রথার অন্তর্গত সকল পদাধিকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রেই 'মনসব' কথাি ব্যবহৃত হতো না। কেবলমাত্র উচ্চপদাধিকারীদের ক্ষেত্রেই তা প্রয়োগ করা হতো অবশ্য প্রশাসনের সকল কর্মচারীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য ছিল।


• অপর একটি সমস্যা ছিল মনসব কথাটি কেবলমাত্র সামরিক ক্ষেে ব্যবহার হতো। অবশ্য এই ব্যাখ্যা ছিল কেবলমাত্র কল্পনাপ্রসূত। মনসব কথাি ছিল কাল্পনিক। কারণ এক্ষেত্রে সকল কর্মচারীকে সমান মর্যাদা দেওয়ার কথ বলা হলেও সকলের ক্ষেত্রে সামরিক দায়িত্ব পালন করা সবসময় কর্তব্যমূল ছিল না। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে মনসবদারি প্রথার অন্তর্গত সকল কর্মচারীকেই সামান্য হলেও সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হতো।


> অর্থ: আকবর তাঁর রাজত্বে ২১তম বছরে ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে এই প্রথ প্রবর্তন করেন। সরকারি পদমর্যাদা ধারণকারী বিভিন্ন স্তরের মনসব গ্রহীতাগ মনসবদার নামে পরিচিত ছিলেন।


> বৈশিষ্ট্য: মুঘল যুগের সামরিক শাসনে মনসবদারি ব্যবস্থা ছিল এব বিরাট বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অধ্যায়, যা পূর্ববর্তী ভারতীয় শাসকদের থেকে ছিল ভিন্ন এব সম্পূর্ণ নতুন এক পদক্ষেপ। মনসবদারি ব্যবস্থায় -
প্রথমত, মনসবদারগণ সরাসরি বাদশাহের অধীনে ছিলেন। তাঁদের দু'টি ভা' ছিল যার একটি ছিল জাট অপরটি ছিল সওয়ার নামে পরিচিত।
দ্বিতীয়ত, মনসবদারি ব্যবস্থার রীতি অনুসারে প্রতিটি ব্যক্তি তাঁদের যোগ্যত অনুযায়ী মনসবদার নিযুক্ত হতেন। তাঁদের কর্মক্ষমতা অনুসারে কার্যসীমাও নির্দিষ করে দেওয়া থাকত।
তৃতীয়ত, প্রতিটি মনসবদারের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা থাকত যাঁর প্রয়োজনে সম্রাটকে সৈন্যের জোগান দিতেন।
চতুর্থত, মনসবদারদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বরখাস্ত সবই সম্রাটের ইচ অনুসারে হতো। সম্রাট ইচ্ছে করলে যেকোনো মনসবদারকে যেকোনো সমা পদোন্নতি ও পদের অবনতি এমনকী বরখাস্ত করতে পারতেন। তবে সম্রাট যোগ মনসবদারদের কখনোই অবহেলা করতেন না।


বেতন ও মর্যাদা: মনসবদাররা নগদে এবং জমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে এ বেতন পেতেন। একশত জাঠ বিশিষ্ট মনসবদারদের বেতন ছিল ৫০০ টাকা। যে সব মনসবদার নগদে বেতন পেতেন তাঁদের বলা হতো 'নগদী'। কোনো মনসবদার পদমর্যাদা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে তাঁর পদ যেকোনো সময়ে কেড়ে নেওয়া হতো।


> মনসবদারদের স্তর: মুঘল যুগে আকবরের সময়ে মনসবদারদের কয়েকটি
স্তরে বিভক্ত করা হয়েছিল। মনসবদারি ব্যবস্থার স্তর ছিল সর্বমোট ৩৩টি, যা অশ্ব ও সেনাসংখ্যার ভিত্তিতে বিভক্ত হতো। তবে সম্রাটের নিকটবর্তী আত্মীয়রা এবং তাঁর চরম বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ স্তরের মনসবদারি পেতেন।


> মনসবদারদের শ্রেণিবিভাগ: মনসবদারদের অনেকগুলি শ্রেণি ছিল।
যেমন-৫০০ 'জাঠ'-এর নিম্ন পদাধিকারকে বলা হতো 'মনসবদার'। পঁচিশ হতে দুহাজার পঁচিশের নিম্ন পদাধিকারীকে বলা হতো 'আমির' এবং এর ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীকে বলা হতো 'আমির-ই-উমদি'। কিন্তু এই তিন শ্রেণির পদাধিকারীদের সকলকেই সাধারণভাবে মনসবদার বলা হতো। মনসবদারদের এই শ্রেণিবিভাগের যদিও কোনো কঠোরতা ছিল না।



মূল্যায়ন: মনসবদারদের মাধ্যমে সৈন্যদের বেতন দেওয়ার ফলে এই প্রথাতে ব্যাপক দুর্নীতি দেখা দেয়। তবে এর মাধ্যমে সৈন্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত সহজ ছিল।- উরভঙ্গজেবের মৃত্যুর পর অবশ্য মনসবদারি প্রথা ভেঙে পড়ে।


🙏🌏আমাদের সাহায্য করেছেন অভিজ্ঞ ইতিহাসবিদ এবং ছোট্ট সদস্য কিরণ দেবনাথ মিরময় বর্মন সুশান্ত বর্মন এবং অপু বর্মন তাছাড়াও অভিজ্ঞ সদস্যরা এই নোটটি দিয়ে সহায়তা করেছেন।👍

Post a Comment

0 Comments