ইকতা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। ইকতা প্রথা বলতে কী বোঝো?

 ইকতা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।
 অথবা, 
ইকতা প্রথা বলতে কী বোঝো?




উত্তর 

✒️সূচনা: ইকতা কথার অর্থ হলো ভাগ বা অংশ। সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ইলতুৎমিশ তাঁর প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থাকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য প্রথ এই ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন। ইসলামীয় রীতি অনুসারে উৎপন্ন ফসলের উদ্ভব অংশ সরকারের প্রাপ্য হিসাবে গণ্য হতো। ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবের মতে-সুলতানি যুগে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফসল আদায় করার জন্য যে রীতির প্রচলন ছিল তা'ইকতা প্রথা' নামে পরিচিত।


✒️ইকতার বিষয়বস্তু: সুলতানি যুগে ইলতুৎমিশ প্রথম এই ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল দূরবর্তী প্রদেশের সঙ্গে দিল্লির বা রাজধানীর যোগাযোগ রক্ষা এবং দূরবর্তী প্রদেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা। এর জন্য তিনি যে কর্মচারী নিয়োগ করেন তাদের বলা হতো ইকতাদার বা মাকতি।


✒️ইলতুৎমিশের সময়: ইলতুৎমিশের সময়ে তাদের মূলত দু'ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হতো। প্রথমত: নিজ নিজ ইকতার অন্তর্ভুক্ত প্রদেশ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা এবং নিজ অঞ্চল বা প্রদেশের প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচ মিটিয়ে বাকি অংশ রাজা খাতে জমা করা। দ্বিতীয়ত: প্রত্যেক ইকতাদারকে নিজ নিজ প্রদেশে সামরিক বাহিন গড়ে তুলে ঐ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য নিরাপত্তার বেষ্টনি তৈরি করা। এছাড়া সুলতানের প্রয়োজনে তাঁে প্রয়োজনীয় সামরিক সাহায্য প্রদান করা।



✒️আলাউদ্দিন খলজির সময়: সুলতানি যুগে আলাউদ্দিনের সময়ে এর কিছুটা প্রসার হয়েছিল। তিনি জঙ্গলাকীর্ণ জমিকে কৃষিজমিতে পরিণত করে সেগুলি ইকতাদারদের মধ্যে বণ্টন করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি পূর্বের সুলতানদের মতো ইকতাদারদের জমি নয় নগদ বেতন দেবার ব্যবস্থা করেন। ফলে ইকতাদারদের স্থানীয় নাগরিকের প্রতি শোষণ ও অত্যাচার বহুলাংশে কমে যায়। সর্বোপরি আলাউদ্দিন খলজি দুর্নীতিগ্রস্ত ইকতাদারদের কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করেন।


✒️গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সময়ে: তুঘলক বংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ইকতাদারদের প্রতি কিছুটা উদাসীন ছিলেন। তাঁর সময়ে তাই ইকতাদারদের উপর দিল্লির সুলতানির নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়।


মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়ে মহম্মদ বিন তুঘলকও তাঁর সময়ে প্রাদেশিক ইকতাদারদের নগদ বেতন দেবার ব্যবস্থা করেন। তিনি সেনাবাহিনীর ব্যয় ও রাজস্ব আদায়ে পৃথক পৃথক ব্যবস্থা করেন। যদিও তাঁর পরবর্তী সুলতান আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যান। তিনি ইকতাদারদের বংশানুক্রমিক অধিকার স্বীকার করেন।


মূল্যায়ন: মূলত সামন্ত প্রথার অবসানে ইকতা প্রথার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন ত দিল্লির সুলতানগণ। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কারণ এটি ভবিষ্যতে প্রায় সামন্ততন্ত্রকেই ম ফিরিয়ে এনেছিল। ইকতা প্রথা বংশানুক্রমিক হবার ফলে পরবর্তীতে ইকতাপ্রাপ্ত বক্তির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠে।

Post a Comment

0 Comments