লেখক শিশুদের ভালোবাসেন। তাঁর কাছে শিশুরা ভোরবেলার এক ঝলক সোনালি রোদ, কিংবা গুমোট গরমের দিনে এক পশলা ফিলফিলে বৃষ্টি, নীল আকাশের গায়ে এক ঝাঁক বলাকা। আসলে লেখক শিশুদের অনেক ভালোবাসেন তাই তাদের মানুষের মতো মানুষ করার প্রবল বাসনা তার মধ্যে আছে।
লেখকের বাড়িতে সেদিন বৌদির এক বন্ধু বেড়াতে এসেছিলেন। আট বছরের এক বালক বন্ধুটার সাথে ছিল। লেখকের ধারণা এরাই একদিন মানুষ হবে। বাড়ীর ভিতরে বৌদি ও তার বন্ধুর সাথে গল্পের আসর জমল। লেখকের পড়ার ঘরে বালকটা 'আসায় লেখকের কোনোরকম বিরক্তির প্রকাশ নেই।
লেখক বালকটির নাম জিজ্ঞেস করায় বালকটি বললো-'নাম বললে কিন্তু বাক্ষ্ম নান জিজ্ঞেস করবে না বতো? ঐ বালকটিকে লেখক সাহস দিলেন সে তার নাম বললো। তার নাম শ্রীযুক্তবাবু গোলোকেন্দ্র প্রসন্ন পুরোকায়স্থ। নামটির বানান ও উচ্চারণ কম কঠিন নয় তার জন্য তাকে সারাজীবন করতে হবে। বালকটিকে লেখক প্রশ্ন করেন-'তুমি কি পড়ো-টড়ো? খোকা উত্তর দেয়-'অমি ইংরেজী পড়ি' বলে গড় গড় করে A থেকে Z পর্যন্ত বলে উঠে। লেখকের ধারণা এই বালকটি একদিন মানুষ হয়ে উঠবে।
এরপর ইতিহাসের গল্প লেখক শেখাতে চায় গোলককে। লেখকের কাছে গোলক বলেই বসে যে, সে ইতিহাস জানে না কিন্তু পাতিহাঁস জানে তখন লেখক তাকে চুপ করে গল্প শুনতে বলে প্রতাপাদিত্যের গল্প করা শুরু করেণ। তবে গোলক বার বার গল্পের মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে থাকে। এরজন্য অন্যরা ধৈর্য্য হারিয়ে দিতে পারে বা রাগ বশত চড় দিতে পারে। কিন্তু লেখকের ধারণা ছিল যে শিশুদের মধ্যে কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক সেটি না থাকলে তারা বড় হবে কিভাবে।
এরপর লেখক প্রতাপাদিত্যের মজার গল্প আরম্ভ করেন। তিনি বললেন প্রতাপের বাবা প্রতাপকে একদিন ছোটো কুঠার দিলেন যখন প্রতাপ প্রতাপ ছিল। যেখানে সেখানে যেন কুঠারটি ফেলে না রাখে তার জন্য প্রতাপকে সাবধান হতে গোলককে যখন লেখক জিজ্ঞাসা করলেন বুঝতে পারছো তো? কিন্তু তার চোখ মুখ দেখলে গণ্য হয় তার মনের মধ্যে অনেক অনেক প্রশ্ন নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর লেখক বলেই চলল। প্রতাপও বিদ্যায় হাত পাকানোর জন্য কুঠার হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল এবং সর্বপ্রথম কচু গাছ শেষ করবে কলাবাগানে গেল এবং শেষে আম বাগানের মধ্যে তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় ফজলি আম গাছ কেটে ফেলল।
বিকেলে প্রতাপের পিতা বাগানে বেড়াতে গিয়ে এই সমস্ত ঘটনা দেখতে পেয়ে সবাইকে ডাক দিয়ে প্রশ্ন করেন যে কে এই ফজলি আম গাছ কেটেছে? সবাই অস্বীকার করলো কিন্তু প্রতাপ বললেন 'না না আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। আমিই আমার ছোট কুঠারখানা দিয়ে গাছটি কেটে ফেলেছি।' তখন প্রতাপের বাবা বললেন, 'তোমার সত্যবাদিতায় আমি মুগ্ধ হলাম। তোমার একটা মিথ্যা কথা দুঃখ নেই।' অর্থাৎ প্রতাপ সত্য কথা বলতে শিখুক এটাই প্রতাপের বাবা চাইতেন।
কিন্তু বালকটি বিষয়টির সম্পর্কে উল্টো বুঝেছে। এখানে লেখকের ধৈর্য্যের প্রশংসা করা দরকার কারণ শিশুদের শিক্ষাদান করা সহজ নয়। গল্পের ছলে শিশুদের নীতি শিক্ষা প্রদান করতে হবে এবং তাদের সুচরিত্র গঠন করতে হবে। লেখক ছেলেটিকে এখন পর্যন্ত গল্পের ছলে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তখন বৌদির বন্ধু সেই সময়ে গোলক কে ডেকে নেয়।
যাবার পথে গোলক তার মাকে বলেছিল মা ভারি মজার গল্প এই লোকটি বলেছিল। একটি ছেলে তার বাবার নাম প্রতাপ ছেলে তার বাবাকে ডেকে বলেছিল একটা ফজলি আমের গাছ কাটতে। এই কথা শুনে তার বাবা বলেছিল আমি হাজার মিথ্যা কথা বলব তাও ভালো কিন্তু একটা ফজলি আম গাছ কাটতে পারব না। আসলে বাচ্চারা যে ইচড়ে পাকা, তার যে উল্টোটা বোঝে তাই লেখক তার এই গল্পে উপস্থাপন করেছেন।
0 Comments