দক্ষিণ দিনাজপুর বালুরঘাট
গৌতম বুদ্ধের জীবনী | বুদ্ধদেব সম্পর্কে প্রজেক্ট
গৌতম বুদ্ধের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা মূলক উত্তর ভিত্তিক সমালোচনা করা হলো প্রত্যেকটি ক্যান্ডিডেটদের ক্ষেত্রে এটি প্রজেক্ট এবং ইম্পরট্যান্ট একটি কোয়েশ্চেন এটি পরীক্ষায়ও আসতে পারে।
🔴গৌতম বুদ্ধের জন্ম:-
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক হলেন গৌতম বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে শাক্য নামে এক ক্ষত্রিয় রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গৌতম বুদ্ধ। পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা। তার মায়ের নাম মায়াদেবী। বুদ্ধের জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ 566 খ্রিস্টপূর্বাব্দকে গৌতম বুদ্ধের জন্মকাল হিসাবে মেনে নিয়েছেন। মা মায়া দেবীর কোল আলো করে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন মা মায়াদেবী যে শ্বেতহস্তি ও পদ্ম ফুলের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সর্বজন বিদিত।
🔴মহাভিনিষ্ক্রমণঃ
গৌতম বুদ্ধের রাজকীয় বিলাস-বৈভব মনকে মোটেই আকৃষ্ট করতে পারেনি। মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি প্রভৃতির চিন্তা তাকে আকুল করে তোলে বুদ্ধদেব কে। বুদ্ধদেব সংসার সম্পর্কে ক্রমে উদাসীন হয়ে পড়লে পিতা শুদ্ধোধন মাত্র 16 বছর বয়সে তাঁকে যশোধরা বা গোপা নামে সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। ক্রমে সংসার জীবনে দুঃখ, জরা-ব্যাধি এবং মৃত্যুর বিষয়গুলি গৌতম বুদ্ধকে খুব ভাবিয়ে তোলে। বৌদ্ধধর্মে এই তিনটি বিষয়কে "ত্রিতাপ" বলে। মানবজীবন থেকে "ত্রিতাপের যন্ত্রণা" মোচনের জন্য তিনি উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। 29 বছর বয়সে রাহুল নামে তার এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। গৌতম সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে রাজকীয় ঐশ্বর্য, পুত্র রাহুল ও স্ত্রী যশোধরাকে ত্যাগ করে একদিন গভীর রাতে তিনি গোপনে গৃহত্যাগ করেন। তাঁর এই গৃহত্যাগের ঘটনা "মহাভিনিস্ক্রমণ" নামে পরিচিত।
🔴 বুদ্ধের দিব্যজ্ঞান লাভঃ
গৃহত্যাগের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘদিন কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও তপস্যার সাধন ভজন পর দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং তার বহু শিষ্য হয় বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে তিনি তাল মিলিয়ে বাস্তবকে সত্য রূপে তুলে ধরেছেন গৌতম বুদ্ধ, এবং "মহাজ্ঞানী" হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ। এসময় থেকে তিনি "গৌতম বুদ্ধ" বা 'তথাগত' নামে পরিচিত হন তার শীর্ষ এবং বিশ্ব দরবারের মাঝে।
🔴 বুদ্ধের ধর্মপ্রচারঃ
দিব্যজ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ মানবকল্যাণের কথা ভেবে তাঁর মতাদর্শ প্রচার করেন প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে গ্রামে গঞ্জে ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি গয়ার নিকটস্থ উরুবিল্ল গ্রামে এক বৃহৎ পিপল গাছের তলায় বসেন। এই সময় নিকটস্থ গৃহস্থ কন্যা সুজাতা তাকে এক বাটি পয়সা দিয়ে যান। তিনি তৃপ্তির সঙ্গে তা ভক্ষণ করেন। তিনি তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যদি তার দেহের রক্ত শুকিয়ে যায় এবং তার কিছু হয় অকেজ হয়ে পড়ে তাহলেও তিনি ধ্যান ভঙ্গ করবেন না। তখনই তিনি এই আসন ত্যাগ করেন। যখন তার উদ্দেশ্য শিল্পী হবে এইভাবে ৪৯ দিন তিনি এই বৃক্ষের তলায় এক মনে বসে থাকেন। ৩৫ বছর বয়সে জ্ঞান লাভের পর থেকে মাতৃত্ব বৌদ্ধদের ধর্ম প্রচার রকের ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এই নবলব্ধ জ্ঞান তিনি জগতে প্রচার করবেন কিনা সে বিষয়ে তার সংশয় ছিল। কেননা এই জ্ঞান ছিল খুবই সূক্ষ্ম ও গভীরতর। বুদ্ধ পরবর্তী গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মার অনুরোধে অন্ততপক্ষে আধ্যাত্মিক দিক থেকে অগ্রণী ব্যক্তিদের মাঝে এই জ্ঞান প্রচারে তিনি সিদ্ধান্ত নেন । আবার মগদে অবস্থিত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বহু পরিব্রাজনকের মধ্যে বুদ্ধ তার এই নতুন জ্ঞানের গুরুত্ব কি বোঝাতে সক্ষম হন। এছাড়াও বেশ কিছু মানুষ ব্রাহ্মণ্য ধর্ম থেকে বৈধ ধর্মে পড়াতরিক মানুষ এদের মধ্যে বেশ কিছু গৃহী ও ছিলেন। যে সমস্ত ব্যক্তি তার ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুরিপুত্র,মৌদগল্যায়ন ও ধনী বণিক অনাথপিণ্ডক। মগধের শাসকগণ, যথা—বিম্বিসার, অজাতশত্রু ও পরবর্তীকালে মুণ্ড তাঁর ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি কপিলাবস্তুতে যান এবং সেখানে পিতা শুদ্ধোধন, পালিকা মা মহাপ্রজাপতি গৌতমী, স্ত্রী যশোধরা, পুত্র রাহুল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দেবদত্তকে এই ধর্মে দীক্ষিত করেন। এই সময় তাঁর পিতৃবংশ শাক্যদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কোলিয়দের দীর্ঘদিনের সংঘাত প্রায় যুদ্ধের রূপ নিয়েছিল। সর্বোপরি বলা যায় যে তার জ্ঞান ছিল অমূল্য এবং অমৃত।গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রথম সারানাথের মৃগদাবে তাঁর ৫জন অনুরাগীর মধ্যে তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন এবং তাঁদের বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন। এরা হলেন কৌন্ডিণ্য, ভদ্রিক, অশ্বজিৎ, বাষ্প এবং মহানাম।
বৌদ্ধ ধর্মমত
[1] ধর্মচক্র প্রবর্তন; পরমজ্ঞান লাভের পর বুদ্ধদেব কাশীর কাছে ঋষিপত্তনে (সারনাথ)-র মৃগদাবে পঙ্গু ভিক্ষু অর্থাৎ পাঁচজন সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর লম্বজ্ঞান বিতরণ করেন। এই ঘটনা ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন' নামে খ্যাত। এরপর ৪৫ বছর তিনি কাশী, কোশল, মগধ প্রভৃতি স্থানে ধর্মপ্রচার করেন।
[2] চারটি আর্যসত্য: বুদ্ধদেবের লক্ষ্য ছিল দুঃখের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা। বুদ্ধের মতে, আসক্তির কারণে মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। এভাবে জন্মান্তরক্রিয়া চলতে থাকে। এই দুঃখরূপ কর্মফল ভোগ (অর্থাৎ বারবার জন্মগ্রহণ) থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য বুদ্ধদেব মানুষকে চারটি 'আর্যসত্য' (Four Noble Truths) উপলব্ধি করার পরামর্শ দিয়েছেন। চারটি আর্যসত্য হল— (i) এ পৃথিবী দুঃখময়, (ii) মানুষের কামনা, বাসনা ও আসক্তি থেকেই দুঃখের সৃষ্টি হয় ('সমুদয়') (iii) কামনা, বাসনা ও আসক্তিকে নিবৃত্ত করতে পারলে মুক্তিলাভ সম্ভব ('নিরোধ) এবং (iv) কামনা, বাসনা, আসক্তি দূর করার জন্য নির্দিষ্ট পথ (বা 'মাৰ্গ') অনুসরণ করা দরকার। আত্মার মুক্তিকে তিনি 'নির্বাণ' নামে অভিহিত করেছেন।
• [3] অষ্টাঙ্গিক মার্গ
গৌতম বুদ্ধ
(i) পরিচিতি: আসক্তিমুক্ত হয়ে নির্বাণলাভের জন্য বুদ্ধদেব আটটি পথ বা অষ্টাঙ্গিক মার্গ (Eightfold Path) অনুসরণ করতে বলেছেন। এই আটটি পথ হল—সত্ত্বাক্য, সৎকর্ম, সৎসংকল্প, সৎচেষ্টা, সজীবিকা, সৎচিন্তা, সচেতনা ও সৎসমাধি। (ii) মূল লক্ষ্য: অষ্টাঙ্গিক মার্গের মূল লক্ষ্য হল সৎ পথে থেকে
অহিংসার মাধ্যমে সত্যকে উপলব্ধি করা। সামাজিক সংঘাত
বর্জন করে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেব এই
মার্গ অনুশীলনের ওপর বিশেষ জোর দেন।
(iii) শীল, চিন্ত ও প্রজ্ঞা: অষ্টাম্পিক মার্গের সঙ্গে তিনটি বিষয় গভীরভাবে জড়িত, যথা—শীল, চিত্ত ও প্রজ্ঞা। শীল' হল নৈতিক শুদ্ধতা, ‘চিত্ত’হল ধ্যানের দ্বারা মনের সংযম এবং 'প্রজ্ঞা' হল পরম আন। ত্রিপিটকে 'শীল', 'চিত্ত' ও 'প্রজ্ঞা'—এই তিনটি বিষয়ের অনুশীলনের কথা বলা হয়েছে।
(iv) মধ্যমপন্থা: বুদ্ধদেব নির্দেশিত এই কর্মগুলির মধ্যে যেমন চরম ভোগের প্রকাশ ছিল না, তেমনি ছিল না কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন। তাই এগুলিকে মধ্যপন্থা (middle path) বা মঝিম পন্থা নামে অভিহিত করা হয়েছে।
[4] পঞ্চশীল: বুদ্ধদেব তাঁর অনুগামীদের কয়েকটি নৈতিক আচরণবিধি পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যথা—চুরি না করা, ব্যভিচারী না হওয়া, অসত্য পরিহার করা, হিংসা না করা এবং সুরাপান না করা। এই নীতিগুলি ‘পঞ্চশীল' নামে পরিচিত।
[5] বৌদ্ধসংঘ: সংঘ হল ত্রিরত্ন (বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ)-এর একটি রত্ন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠিত ও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেব সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলেই সংঘের সদস্য হতে পারতেন। আট বছর বয়সের যে-কোনো নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংঘে প্রবেশ করতে পারত।
[6] বৌদ্ধ সাহিত্য: বুদ্ধের দেহত্যাগের পরে রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বুদ্ধের উপদেশগুলি তিনটি খণ্ডে সংকলিত করা হয়। এই খণ্ডগুলি বিনয় পিটক, সুত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক নামে পরিচিত। তিনটি টিক করে রিপিটক নামে ম্যান। কিম পিটক-এ বুদ্ধ নির্দেশিত ধর্মীয় আচার, সুপ্ত পিটকে ধর্মীয় উপদেশাবলি এবং অভিধর্ম পিটকে বৌদর্শনের কথা লিপিকা আছে। বুদের মীবনকাহিনিভিত্তিক তক উপাদানগুলিও বৌদ্ধ সাহিত্যের আশ হিসেবেই বিবেচিত হয়।।
: বিরিদার অজাতশ কোশলরাজ প্রসেনজিৎ- সহ বহু পুরুষ ও নারী তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বুদ্ধের শিখ শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলেন, যেমন— উপাসক ও ভিক্ষু। যাঁরা শি করেও সংসারধর্ম পালন করতেন, তাঁর উপাসক সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করাতেন, তাঁরা ভিক্ষু নামে পরিচিত।
গৌতম বুদ্ধের দেহত্যাগ:-
এই সময় তিনি তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ এবং সাত বৎসরের পুত্র রাহুলকে দীক্ষিত করে রাজধানী ত্যাগ করেন। এরপর ইনি ১৩ বৎসর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ধর্মমত প্রচার করে বেড়ান। পিতার অসুস্থতার কথা শুনে বুদ্ধ কপিলাবস্তুতে আসেন এবং পিতার মৃত্যুকালে পিতার নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি পুরনারীদের বৌদ্ধ ভিক্ষুতে পরিনত করেন এবং তাদের নেত্রী করে দেন। তাঁর স্ত্রী গাতে পাকে। এরপর বুদ্ধ তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য আবার পথে বেড়িয়ে পড়েন। ৮০ বছর বয়সে নেপালের কুশী নগরে ইনি দেহত্যাগ। করেন। কথিত আছে তাঁর জন্ম, বাজে ধিলাভ ও মৃত্যু একই সময় ও তারিখে হয়েছিল।
উপসংহার: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রচলিত বৈদিক ধর্মের প্রতিবাদ হিসেবে বৌদধর্মের উত্থান ছিল একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। তবে বৈদিক ধর্মের প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে উঠলেও তা সম্পূর্ণ বৈদিক (হিন্দু) ধর্মের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার তাই বৌদশকে 'হিন্দুধর্মের একটি সংস্করণ বলে উল্লেখ করেছেন।
(বন্ধুরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তোমরা সেখানে যুক্ত হয়ে যাও এবং প্রতিনিয়ত অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি চাকরি-বাকরি আপডেট তোমরা প্রতিনিয়ত পেয়ে যাবে)
Official YouTube film:-Click here
ইউটিউব ভিডিও লিংক:-https://youtu.be/S8VGRf3NCBo
0 Comments