বক্রোক্তি অলংকার কাকে বলে? এর শ্রেণিবিভাগ দৃষ্টান্ত সহকারে আলোচনা করো।
উত্তর:- শব্দালংকারের শেষ অলংকার বক্রোক্তি। বক্রোক্তি মানে বাঁকা কথা। অর্থাৎ কোনো কথা সহজভাবে না বলে একটু ঘুরিয়ে বলা বা বাঁকাভাবে বলা। কণ্ঠস্বরের ঈষৎ বিকৃতির জন্য বা ইচ্ছাকৃত কোনো কথা সহজভাবে না বলে বাঁকাভাবে বললে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে পৃথক অর্থ দাঁড়ায়, তাকে বলে বক্রোক্তি অলংকার। যথা—
“মশায় বুঝি পানাসক্ত! আজ্ঞে হ্যাঁ, তবে জর্দা থাকা চাই।”
প্রশ্নকর্তা বলেছিলেন মহাশয় মদ্যপানে আসক্ত কিনা। কিন্তু উত্তরদাতা কৌশলে জানিয়েছেন, তিনি ‘তাম্বুলাসক্ত', অর্থাৎ পানে জর্দা থাকা চাই। বক্তা যে অর্থে প্রশ্ন করলেন উত্তরদাতা তা অন্য অর্থে গ্রহণ করে উত্তর পালটে দিলেন, এটি বক্রোক্তি অলংকার।
বক্রোক্তি অলংকারের শ্রেণিবিভাগ বক্রোক্তি অলংকারকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— কাকুবক্রোক্তি ও ঔ শেষবক্রোক্তি।
• কাকুবক্রোক্তি :
কাকু অর্থাৎ কণ্ঠস্বরের ভঙ্গি। 'সাহিত্যদর্পণ'কার বিশ্বনাথ চক্রবর্তী-র মতে—
“অন্যস্যানর্থক বাক্যমন্যথা যোজয়েৎ যদি। অন্যঃ শ্লেষণ কাকা বা সা বক্রোক্তিঃ।।”
এ অলংকারে বক্তার কণ্ঠস্বরভঙ্গিই প্রধান। বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্য 'হ্যাঁ' বাচক কথার অর্থ যদি 'না' বাচক হয়, আবার 'না' বাচক কথার অর্থ যদি 'হ্যাঁ' বাচক দাঁড়ায়, তবে তাকে বলে কাকুবক্রোক্তি। সংস্কৃত ভাষায় বাংলার মতো এত বেশি ছেদচিহ্নের ব্যবহার ছিল না। ফলে কাকুবক্রোক্তির ব্যবহার অনেক বেশি। ছিল। তবে বাংলায় এর ব্যবহার বেশ কম। যথা—
“কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ?” বক্তার কণ্ঠস্বরের বলবার বিশেষ ভঙ্গির মধ্যেই এ বাক্যের তাৎপর্য দাঁড়িয়ে আছে। বক্তাই যেন উত্তরটি বলে দিচ্ছেন।
“কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ?”— এখান থেকেই আমরা উত্তর পেয়ে যাচ্ছি- “পদ্মের পর্ণ কেউ ছেঁড়ে না।” বক্তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গির জন্য এই কার্য সাধিত হয়েছে, তাই এটি কাকুবক্রোক্তি। ও শেষবক্রোক্তি : শ্লেষ বক্রোক্তিতে একটি মজা বা কৌতুক সর্বদাই লক্ষিত হয়। এখানে দুজনের প্রয়োজন— বক্তা ও শ্রোতা বা প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা। বক্তা যদি এক অর্থে একটি কথা বলেন কিন্তু শ্রোতা যদি সেটি ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন, তখন তা শ্লেষবক্রোক্তি হয়। এখানে বক্তা যা বলতে চান শ্রোতা তা গ্রহণ করেন না, শ্রোতা নিজের স্বভাববশত একটি উত্তর দিয়ে দেন। যথা- “দ্বিজ হয়ে কেন কর বারুণী সেবন? রবির ভয়েতে শশী করে পলায়ন।” এখানে প্রশ্নকর্তা বলেছেন—ব্রাহ্মণ হয়ে তুমি কেন মদ পান করছ? কিন্তু শ্রোতা এই প্রশ্ন গ্রহণ না করে চমৎকার উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন—সূর্যের ভয়েতে চাঁদ পালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আকাশে সূর্যের আগমনে চাঁদ ডুবে যাচ্ছে। বক্তা ও শ্রোতার এই ভিন্নধর্মী সংলাপে তা হয়ে ওঠে শ্লেষবক্রোক্তি।
0 Comments