বিশ্বপরিচয়' প্রবন্ধের ‘ভুলোক' অংশে রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ সম্বন্ধে যে আলোচনা উপস্থাপন করেছেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ তাঁর জীবননিষ্ঠ মননের ভাষ্য। তিনি যেহেতু যুগপৎ | কবি ও মনীষী সেজন্য তাঁর প্রবন্ধে প্রতিভার ভাবুকতা ও সুতীক্ষ্ণ মননশক্তির পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে এই ‘বিশ্বপরিচয়' প্রবন্ধের ‘ভুলোক' অংশে। রবীন্দ্র কবিতায় ও গানে হামেশাই চাঁদ এক অন্যমাত্রা পেয়েছে। যেমন ‘আকাশের চাঁদ' কবিতায় কবি ছেলেটির মধ্য দিয়ে চাঁদকে না পাওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া রবীন্দ্রসংগীতেও চাঁদ উপস্থাপিত হয়েছে তার মায়াবী রূপ নিয়ে। যেমন-
“যখন এসেছিলে অন্ধকারে চাঁদ ওঠেনি সিন্ধুপারে। ..তুমি গেলে যখন একলা চলে চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে।”
“যখন এসেছিলে অন্ধকারে চাঁদ ওঠেনি সিন্ধুপারে। ..তুমি গেলে যখন একলা চলে চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে।” সুতরাং চাঁদের প্রতি কবির আকর্ষণ সর্বদাই ছিল। তাই 'ভূলোক' অংশে বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি চাঁদকে ত্যাগ করতে পারেননি তাঁর বৈজ্ঞানিক তথা সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ হতে। এই অংশে চাঁদের সৃষ্টিরহস্যের কথা বর্ণনার পাশাপাশি রয়েছে | চাঁদ সম্বন্ধে অজানা তত্ত্বও সমান ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাবন্ধিকের বর্ণনা অনুযায়ী সূর্য থেকে যেমন উৎপত্তি ঘটেছে আমাদের পৃথিবীর তেমনি পৃথিবী থেকে উৎপত্তি ঘটেছে চাঁদের। পৃথিবীর জন্মদাত্রী যেমন সূর্য, তেমনি চাঁদের জন্মদাত্রী পৃথিবী। কোটি কোটি বৎসর ধরে যেমন ভাবে পৃথিবী ঠান্ডা হয়েছে। তেমনি চাঁদও ধীরে ধীরে নিজের তাপ অপসরণ করে ঠান্ডা হয়েছে। 'চাদের থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ২ লক্ষ ৩৯ হাজার মাইল এবং চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ২৭ পূর্ণ ১/৩ দিন। এই প্রদক্ষিণের সময় চাঁদের একটি পিঠ পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে থাকে। নিজের চারদিকে ঘুরতেও চাঁদের মোটামুটি একমাস সময় লেগে যায়। চাঁদের দিন। আর বৎসর ধীর গতিতেই চলে। পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখতে পাওয়ার মূল কারণ হলো পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব অন্যান্য গ্রহদের তুলনায় অনেক কম। পৃথিবীর ওজনের পরিমাণ বোঝাবার জন্য রবীন্দ্রনাথ চাঁদের ওজনের সঙ্গে মিলিয়ে একটি উদাহরণ দিয়েছে। তিনি বলেছেন- আশিটি চাঁদ একসঙ্গে ওজন করলে পৃথিবীর ওজনের সমান হবে। চাঁদের গঠন প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক বলেছেন, চাঁদ অনেকটা পৃথিবীর ন্যায় শক্ত ও এর ভূপৃষ্ঠে রয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত। কোনো জিনিসের গতিবেগ যদি সেকেন্ডে ১ পূর্ণ ১/২ হয় তবে তা চাঁদের টান উপেক্ষা করে সহজেই ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে। তাছাড়া চাঁদে যেহেতু জল হাওয়া নেই তাই সেখানে প্রাণও নেই। প্রাবন্ধিকের মতে- “চাঁদকে একটা তাল পাকানো মরুভূমি বলা যেতে পারে।” এই প্রসঙ্গে এসেছে উল্কাপাতের কথা। রাত্রের ছুটে আসা নক্ষত্রকে বলা হয় উল্কা। পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। কিন্তু বেশির ভাগই পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়বার আগেই ভস্মীভূত হয়ে যায়। যেগুলি আকারে বড়ো হয় সেগুলি অভিকর্ষজ টান উপেক্ষা করে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে সেই জায়গাটা ছারখার করে দেয়। চাঁদেও ক্রমাগত এই উল্কাপাত হচ্ছে। কিন্তু চাঁদে যেহেতু বায়ুমন্ডল নেই তাই চাঁদ সেই উল্কাগুলিকে আটকাতে পারে না। ফলত সেই উল্কাগুলি চাঁদের মাটিতে জ্বলতে জ্বলতে গিয়ে আছড়ে পড়ে বোমের মতো ফেটে যায়। ফলস্বরূপ চাঁদের বুকে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট বিরাট গর্তের। আর সেই বিস্ফোরণের ফলে এত পরিমাণে ছাই চাঁদের পৃষ্ঠে জমা হয়েছে যে সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতেই পারে না। আর নীচের উত্তাপও উপরে আসতে পারে না।
কোনো জিনিসের গতিবেগ যদি সেকেন্ডে ১পূর্ণ ১/২ হয় তবে তা চাঁদের টান উপেক্ষা করে সহজেই ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে। তাছাড়া চাঁদে যেহেতু জন হাওয়া নেই তাই সেখানে প্রাণও নেই। প্রাবন্ধিকের মতে- “চাঁদকে একটা তার পাকানো মরুভূমি বলা যেতে পারে।” এই প্রসঙ্গে এসেছে উল্কাপাতের কথা রাত্রের ছুটে আসা নক্ষত্রকে বলা হয় উল্কা। পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। কিন্তু বেশির ভাগই পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়বার আগেই ভস্মীভূত হয়ে যায়। যেগুলি আকারে বড়ো হয় সেগুলি অভিকর্ষজ টান উপেক্ষা করে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে সেই জায়গাটা ছারখার করে দেয়। চাঁদেও ক্রমাগত এই উল্কাপাত হচ্ছে। কিন্তু চাঁদে যেহেতু বায়ুমণ্ডল নেই তাই চাঁদ সেই উল্কাগুলিকে আটকাতে পারে না। ফলত সেই উল্কাগুলি চাঁদের মাটিতে জ্বলতে জ্বলতে গিয়ে আছড়ে পড়ে বোমের মতো ফেটে যায়। ফলস্বরূপ চাঁদের বুকে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট বিরাট গর্তের। আর সেই বিস্ফোরণের ফলে এত পরিমাণে ছাই চাঁদের পৃষ্ঠে জমা হয়েছে যে সেখানে সূর্যের আলো পৌছাতেই পারে না। আর নীচের উত্তাপও উপরে আসতে পারে না। “চাঁদের যে দিক সূর্যের আলো পড়ে তার উত্তাপ প্রায় ফুটন্ত জলের সমান। আর যেখানে আলো পড়ে না সেখানে এতটা ঠান্ডা হয় যে বরফের শৈত্যের চেয়ে তা প্রায় ২৫০ ফারেনহাইট ডিগ্রি নীচে থাকে”। ওজনের সমান হয়ে। চন্দ্রগ্রহণের সময় এই উত্তাপ সামান্য বৃদ্ধি পায়। যেহেতু চাঁদের হাওয়া নেই তাই চাঁদের নিজস্ব কোনো উত্তাপ নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সে সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয় ঠিক ততটাই তাড়াতাড়ি সে ঠান্ডা হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- “এ সব প্রমাণ থেকে বলা যায় যে, আগ্নেয়গিরির ছাই ঢেকে রেখেছে চাঁদের প্রায় সব জায়গা।” শেষে রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীতে চাঁদের ভূমিকা প্রসঙ্গে আমাদের জানিয়েছেন যে, চাঁদের টানেই আমাদের পৃথিবীতে সমুদ্রগুলিতে জোয়ার-ভাটা হয় যা আমাদের জীবন প্রণালীকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রন করে। এমনকি এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি আমাদের দৈহিক পীড়ার কারণ স্বরূপ চাঁদের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কথাকেও বলতে বাকি রাখেননি, সেটা আমরা শুনে থাকি ঠাকুমার কাছ থেকে। যদিও এটার সত্যতা কতখানি বা এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে কিনা রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে উপস্থাপিত করেননি।
পরিশেষে বলা যায় যে, যেসব বিষয় সেসময়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছিল, সেই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করেই নিজের ভাবের সঙ্গে সেগুলিকে সম্পৃক্ত করে। সহজ সরলভাবে উপস্থাপন করে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'বিশ্বপরিচয়' গ্রন্থটি লিখেছেন এবং তাতে বিশ্বব্রন্তাস্তে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি। তাঁর ভুলোক' অংশে পৃথিবীর বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর একমাত্র উপগ্রহ যে চাঁদের বর্ণনা দিয়েছেন তা খুবই প্রাসঙ্গিক ও অসাধারণ হয়েছে।
0 Comments