রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত 'বিশ্বপরিচয়' প্রবন্ধে সৌরজগতের গ্রহদের বৃষ্টি বর্ণনা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন তার বিবরণ দাও ।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত 'বিশ্বপরিচয়' প্রবন্ধে সৌরজগতের গ্রহদের বৃষ্টি বর্ণনা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন তার বিবরণ দাও ।


✅উত্তর:-
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ হলো 'বিশ্বপরিচয়'। সূর্যের সঙ্গে গ্রহদের সম্পর্ক এবং তাদের উৎপত্তির বর্ণনা প্রসঙ্গে বিশ্বপরিচয় প্রবন্ধের অংশ ‘সৌরজগৎ' এর অবতারণা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করে এবং মহাকাশ সম্বন্ধে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জেনে আমাদের জানিয়েছেন যে, বিশ্বব্রম্ভান্ডে রয়েছে | বিশাল বিশাল নক্ষত্র। সেই নক্ষত্রমন্ডলের মধ্যে ছিল আজকের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বড়ো। একসময় আমাদের এই সূর্যের সঙ্গে আরও এক বিশালাকার নক্ষত্রের ঘটে মুখোমুখি সংঘর্ষ। ফলস্বরূপ যে মহাজাগতিক ঘটনাটি ঘটে তা হলো সূর্য থেকে বিপুল পরিমাণে লাভা নিঃসৃত হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই লাভাপিন্ডগুলি ক্রমান্বয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে খানিকটা গোলাকার রূপ ধারণ করতে থাকে। অবশেষে কোটি কোটি বছর পর সেই লাভাপিন্ডগুলি ঠান্ডা হতে থাকে এবং অবশেষে গ্রহের রূপ ধারণ করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- “প্রায় ৫/৬ হাজার কোটি বছরে একবার মাত্র এরকম অপঘাত ঘটাতেও পারে। গ্রহসৃষ্টির এই মত মেনে নিলে বলতে হবে যে গ্রহপরিচয়ওয়ালা নক্ষত্র সৃষ্টি এই বিশ্বে প্রায় অঘটনীয় ব্যাপার।”
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সেইসময়ের নিক্ষত্রমেলা'র যুগে অনেক নক্ষত্র থেকেই এইরূপ গ্রহ সৃষ্টির সম্ভাবনা যে ছিল তা অস্বীকার করা যায় না। যদিও অনেক বৈজ্ঞানিক এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ ব্যাপারটিকে বোঝাবার জন্য আমাদের সামনে শিমূল ফলের উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিমূল গাছের ফল যেমন একটা সময় পর ফেটে তার মধ্যে থেকে বীজগুলি বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনি এই রম্ভান্ডে এমন বহু নক্ষত্র রয়েছে যেগুলিতে প্রতিনিয়ত হতে থাকে বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের মাত্রা যখন উচ্চপর্যায়ে পৌঁছায় তখন সেই নক্ষত্রটি হয়ে ওঠে অধিকতর উজ্জ্বল। সেইসময় তা হাত বেরিয়ে আসে 'পৃথ পূর জ্বলন্ত বাষ্প যা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ক্রমে ঠাণ্ডা হয়ে ধারণ করে গ্রহের রূপ। যদিও এই গ্রহগুলির দর্শন খালি চোখে সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী দূরবিনের।
সৌরজগৎ সৃষ্টি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ তৎকালীন এক ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিকের কথা আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তিনি হলেন ক্রেম্বিজের অধ্যাপক লিট্‌ লন। তাঁর মতে, মহাকাশে পাশাপাশি অবস্থিত রয়েছে বহু নক্ষত্র। যারা একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, ঠিক তেমনি আমাদের সূর্যের পাশে ছিল তেমনই আরেকটি নক্ষত্র। সেই নক্ষত্র যখন প্রবল আকর্ষণে সূর্যের গায়ে ধাক্কা মেরে সূর্যকে বহুদূরে ছিটকে দিয়েছিল তখন সূর্য থেকে তার নিজস্ব উপাদান নিয়ে মস্ত বড়ো একটি জ্বলন্ত বাষ্পের টানা সূত্র বের হয়ে এসেছিল। এইসব বাষ্পপিন্ডের মধ্যে যেগুলি সূর্যের প্রবল আকর্ষণে বাঁধা পড়ে গেল সেগুলি আকৃতিতে ছোটো হওয়ার কারণে ঠান্ডা হতে বেশি নিল না। ফলে গ্যাসীয় উপাদানগুলিও ধীরে ধীরে তরল রূপ ধারণ করে পড়ে আরও ঠান্ডা হয়ে শক্তরূপ ধারণ করে গ্রহের রূপ নিল।
রবীন্দ্রনাথ সৌরজগতের উৎপত্তি বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ তুলে ধরলেও তিনি জানিয়েছেন- “এ সকল আন্দাজি মতকে নিশ্চিত প্রমাণের মধ্যে ধরে নেওয়া চলবে না।”
পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত আলোচ্য প্রবন্ধে বিভিন্ন উপমা ও উদাহরণ দিয়ে সহজ ও সরল ভাষায় বিশ্বব্রম্ভান্ডের বিষয় উপস্থাপন করেছেন। অনেক অজানা তথ্য তথা রহস্যের উন্মোচন ঘটিয়েছেন প্রাবন্ধিক। যে কারণে প্রবন্ধটি সুখপাঠ্য ও সার্থক হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments