হিন্দু মুসলমান' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও। হিন্দু মুসলমান প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় আলোচনা করো।



হিন্দু মুসলমান' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও।

অথবা,

হিন্দু-মুসলমান প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি ভঙ্গি

অথবা,

‘হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধের সারমর্ম ।

অথবা,

হিন্দু মুসলমান প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় আলোচনা করো।








 হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধটির উৎস : 'কালান্তর' প্রবন্ধ গ্রন্থে 'হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধটি আছে। ‘হিন্দু মুসলমান' প্রবন্ধটি রচনা হয় শ্রাবণ, ১৩৩৮ (ইং- ১৯৩১ খ্রিঃ)। ‘কালান্তর' বইটি প্রকাশ ১৯৩৭ খ্রিঃ। ‘হিন্দু মুসলামন' প্রবন্ধটি 'কালান্তর' গ্রন্থের সংযোজন অংশে আছে। প্রকাশ : ‘প্রবাসী' পত্রিকায়। শ্রাবণ, ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ। ইং- ১৯৩১ খ্রিঃ


🔴‘হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধের সারমর্ম :

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩১ খ্রিঃ হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধটি রচনা করেন। ১৯৩৭ খ্রিঃ প্রকাশিত ‘কালান্তর' প্রবন্ধগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয় প্রবন্ধটি। রবীন্দ্রনাথ সেই সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন ভারতবর্ষে সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব কত গভীর এবং মূল কারণ কি তাও বুঝেছিলেন। ‘হিন্দু-মুসলমান' প্রবন্ধে দুই সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বের কারণ, তার প্রতিকার এবং তার ভলো-মন্দ ইত্যাদি যুক্তি, তুলনা-উপমা দিয়ে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন নিজের প্রয়োজনে অন্যকে ডাকি, কিন্তু তাকে ভালোবাসি না। আবার তার প্রয়োজনে এগিয়ে যাই না। রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে একদম আজকে (২০২০ খ্রিঃ) সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব বেড়েছে বই কমে নি। ভারতবর্ষে মূলত দুটি জাতির বাস। এক হিন্দু, দুই-মুসলমান। এই দুই জাতির একত্র বাস হলেও মনের মিল নেই তেমন। ভেদ এবং বিরোধ রয়েছে। ভারতবর্ষে দুই সম্প্রদায় এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে যদি একপক্ষ অন্যপক্ষকে দাবিয়ে রেখে এগোতে চায় তাতে হিতের বিপরীত হবে। যা বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। এতে উৎপাতকে চিরকাল উত্তেজিত করে রাখাই হবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যে দেশে প্রধানত ধর্মের মধ্যেই মানুষকে খোঁজে, সে দেশ হতভাগ্য। ধর্মকে দিয়ে কেবল বিভেদ সৃষ্টিই হয়, মিলাতে পারে না কাউকে। ধর্মবিদ্বেষের ফলেই বিপ্লব হয়েছে, রাশিয়ায় জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে, মেক্সিকোয় বিদ্রোহ হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে ধর্মের আদি প্রবর্তকগণ মানুষে মানুষে মেলাবার চেষ্টা করেছেন, অহংকার থেকে মুক্তি দেবার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রদায়ের মানুষ তার বিকৃতি করেছেন। মহাপুরুষদের বাণী বিকৃত করে সংকীর্ণ করেছে। এই ধর্ম মানুষকে সর্বনাশের পথে নিয়ে গেছে। মানুষের মহোৎকৃষ্ট ঐশ্বর্যকে ছারখার করেছে। রবীন্দ্রনাথ লক্ষ করেছেন হিন্দু সমাজের আচার বিচার হয়েছে ধর্ম। হিন্দুর আচার বড়ো কঠিন, বড়ো নির্মম, বড়ো গোঁড়া। কিন্তু ধর্ম সরল, উদার। অন্যদিকে মুসলমানের ধর্ম গোঁড়া, আচার উদার, সরল। ধর্ম আমাদের মেলাতে পারে নি, উপরন্তু হাজারখানেক পাকা বেড়া তুলে দিয়েছে। একদিন রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ বন্ধু অ্যান্ড্রুজকে নিয়ে ভ্রমণে গেছেন মালাবার। অর্থাৎ দক্ষিণ ভারতে। সেখানে ব্রাহ্মণ পাড়ায় পা দিতেই তাঁদের সঙ্গে থাকা টিয়া সমাজের এক ভদ্রলোক তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে অন্যত্র দৌড় মারলেন। অ্যান্ড্রুজ সাহেব তাঁকে ধরলেন এবং প্রশ্ন করলেন তার এই প্রস্থানের কারণ। ভদ্রলোক জানালো তাঁদের জাতের ব্রাহ্মণ পাড়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ থেকে বোঝা গেল হিন্দুর কাছে হিন্দুর আত্মীয়তার জোর নেই। ভারতে হ বিশ্বমাতার কোলে এত ভাগ কেন— রবীন্দ্রনাথের মনকে এটাই ভাবায়। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অন্যদের না পেলে বিস্মিত হই, কিন্তু কখনও ভাবি না, সমাজগত কারণে তাঁদের সর্বসময় অনাত্মীয় করে রাখি। ধর্মে-কর্মে-আচারে-বিচারে এক হবার মতো আমাদের উদারতা নেই। এই বিভেদের বীজ আমরা বপন করেছি। তাঁর ফল ফললেই ফলের উপরে দোষ,
বীজের উপরে নয়। এই হচ্ছে ভারতবাসীর জ্ঞান। বঙ্গভঙ্গের সময় মুসলমান সম্প্রদায় মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ালেন। আমাদের উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা ছিল না বলেই এটা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন, ফুটো কলসীতে জল ভরতে গেলে জল তো পড়বেই। কলসীকে চোখ রাঙিয়ে লাভ কি। কলঙ্ক যথাসময়ে ধরা পড়বেই। এই কারণেই পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের উপর উৎপাতে মুসলমানদের সঙ্গে নির্দয়ভাবে একসময় নমশূদ্ররা যোগ দিয়েছিল। নমশূদ্রদের প্রতি হিন্দুদের দরদ ছিল না, প্রীতি ছিল না, আত্মীয়তা ছিল না। আচারে সব সময় তাদের তুচ্ছ করে, অস্পৃশ্য করে রাখা হত। অধিকার পরিবেশনে যদি একপক্ষের উপর পক্ষপাত হয়, অপর পক্ষ সইবে না, অবিচার বলেই নিয়ত অশান্তি হবে, এক সময় মারমুখী হবে। দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয় চাই। বিস্তর কল্যাণের জন্য অনেক খানি সহ্য করতে হয়। পলিটিক্সের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে তালি দিয়ে মিল ঘটাতে পারে কিন্তু তা চিরকালের নয়। পলিটিক্স এর তালিটুকুতে যেদিন টান পড়বে সেদিন তা আলগা হবে। আমাদের ভারতবাসীদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মিলতে হবে একেবারে গোড়ায়, নইলে কল্যাণ নেই। পরস্পরের ধর্মের উপর আঘাত করে নয়, তাকে সম্মান জানিয়ে চললেই বিরোধ হবে না। মানুষে মানুষে প্রকৃত মেলামেশা হলেই পরস্পরের প্রতি দরদ, প্রীতি বাড়বে। ধর্মমত এবং সমাজরীতিতে হিন্দু মুসলমানদের প্রভেদ আছে, বিরুদ্ধতা আছে, একথা সত্য। তা সত্ত্বেও আমাদের পরস্পরের মিল চাই। বর্তমানে
হিন্দু-মুসলমান আলদা হয়ে গিয়ে অনৈক্য বেড়েছে, মনুষ্যত্বের মিলটাকে চাপা দিয়েছে। যেখানে হিন্দু সেখানে হিন্দুর দ্বার সংকীর্ণ। এই আন্তরিক ভেদ যতদিন থাকবে ততদিন রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও এক পক্ষের কল্যাণ ভার অপর পক্ষের হাতে দিতে সংকোচ বোধ করবে। এই দ্বন্দ্বে যখন একে অপর অসহিষ্ণু হয়ে উঠি তখন মূল কারণটা ভেবে দেখি না। শুধু একে অপরকে দোষারোপ করতেই মরিয়া হয়ে উঠি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন অনেক দিনের পুঞ্জিত অপরাধে হিন্দু-মুসলমানের মিলন সমস্যা কঠিন হয়েছে। সেই জন্যই অবিলম্বে এর সমাধানের জন্য উভয়ে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। একে অপ্রসন্ন ভাগ্যের উপর চাপালে হবে না। এ অবস্থায় আমাদের পরস্পরের হৃদয়ে শৃঙ্খলভাব, মানিয়ে নেওয়া ভাব, আত্মীয় ভাবার মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। অন্তরে অন্তরে গ্রন্থি বন্ধন করতে হবে, একে অপরের সহযোগিতায় ভ্রাতৃত্ববোধে এগিয়ে যেতে হবে, অচ্ছুত মনোভাব, এ জাত ওজাত ভাবনা দূর করতে হবে, মনুষ্যত্বই প্রধান এটাই ভাবতে হবে— তা হলে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বের অবসান হবে, ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে, ভারতবর্ষ শ্রেষ্ঠ স্থান হবে। তখনও ১৯৩১ ইংরেজ শাসন করছে এদেশ। রবীন্দ্রনাথ কল্পনা টেনে ব্যাখ্যা করেছেন এরকম, যদি ভারতবর্ষ ত্যাগ করে ইংরেজ চলে যায় এবং তার শাসন ভার এদেশীয়দের হাতে দিয়ে যায় তা হলে দেশের মানুষ কি করবে এবং দেশের পরিস্থিতি বা কেমন হবে। দেশের মানুষের প্রথম দরকার নিজেদের মধ্যে আত্মীয় বন্ধনের। তা না হলে স্বাভাবিক কল্যাণের পথ দুর্গম হয়ে পড়বে। তাই হিন্দু-মুসলমান প্রবন্ধে নানা তুলনা উপমায় দেশ-বিদেশের উদাহরণ টেনে বলতে চেয়েছেন সর্বপ্রথম আমাদের আন্তরিক মিল চাই, তাহলেই ঐকা আসবে। ভারতবর্ষ দৃঢ় হবে। একজনকে বাদ দিয়ে কিংবা দূরে সরিয়ে রেখে আর জন এগোতে পারে না। আমাদের দেশের হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে বিভেদ, যে বিরোধ তার মূল বহু পুরনো। আচারে আচারে ধর্মে ধর্মে যে গোঁড়ামি তাই-ই একে অপর থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। সবাইকে কিছু কিছু ত্যাগ করে একটা মনে পৌঁছতে হবে। সংকীর্ণতার স্থানে উদারতাকে স্থান দিতে হবে। তা হলে খুব শিগগির মিলন হবে। আর মিলন হলেই বৃহৎ ভারতবর্ষের গৌরব আসবে, শক্তি বর্ধন হবে, বিশ্ব সংসারে মহান আসনে আসীন হবে। অধিকার ভাগ করে সমবন্টন করা দরকার। তা না হলে রাষ্ট্রনৈতিক যোগে গোলমাল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। শেষে গুন্ডাদের হাতে লাঠিসড়কির কবলে পড়ে যমের দ্বারেই চরম নিষ্পত্তি হবে। অশান্তি নিয়তই মারমুখো হয়ে যাবে। সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ হিন্দু-মুসলমানের যে প্রভেদ জাতিতে জাতিতে ধর্মে-ধর্মে আচারে বিচারে তা নিরসন করে পরস্পরকে মিলিত হবার কথা বলেছেন। আন্তরিক এই মিল না হলে ভয়ানক সমূহ বিপদ।




আমাদের চ্যানেলটিকে ফলো করো সেখানে তোমরা নিত্যনতুন চাকরি-বাকরির আপডেটের পাশাপাশি তোমরা প্রতিনিয়ত চাকরির গাইড ভিডিও থেকে শুরু করে সাজেশন এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি তাছাড়া আইটিআই ইত্যাদি স্কুল-কলেজের সাজেশন আমাদের এই ছোট্ট চ্যানেলটির মাধ্যমে দেওয়া হয়। তো অবশ্যই বন্ধুরা তোমাদের বন্ধুবান্ধবদের মাঝে শেয়ার করো এবং সাবস্ক্রাইব এর মাধ্যমে আমাদের ছোট্ট পরিবারটিকে বড়ো পরিবারের রূপান্তরিত করো।




YouTube channel link:-Click Here













Post a Comment

0 Comments