হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো।
হরপ্পা সভ্যতা, যা সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা নামেও পরিচিত, বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির একটি এবং এটি প্রায় ২৬০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি বর্তমান পাকিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। সভ্যতাটির নামকরণ হয়েছে হরপ্পা নামক স্থানের উপর, যা প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে আবিষ্কৃত হয়। নিচে হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
---
১. নগর পরিকল্পনা:
বিকেন্দ্রিত নগর ব্যবস্থা: প্রতিটি শহর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছিল। শহরগুলিতে দুই ভাগ ছিল—দুর্গ (সিটাডেল) এবং নীচের শহর।
সমান্তরাল রাস্তা: রাস্তাগুলি ছিল সোজা ও গ্রিডের আকারে সাজানো।
নিকাশি ব্যবস্থা: উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল। প্রতিটি বাড়ির নিকাশি ব্যবস্থা প্রধান নিকাশি লাইনের সাথে সংযুক্ত ছিল।
ইটের ব্যবহার: পোড়া ইট দিয়ে ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট তৈরি করা হত।
---
২. অর্থনীতি এবং বাণিজ্য:
কৃষি: প্রধান ফসল ছিল গম, যব, তুলা এবং মটর। সেচের জন্য কৃত্রিম ব্যবস্থা ছিল।
বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অস্তিত্ব ছিল। মেসোপটেমিয়ার (সুমের) সাথে বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ওজন ও মাপ: নির্দিষ্ট ওজন এবং পরিমাপ পদ্ধতি ছিল।
---
৩. সমাজব্যবস্থা:
শ্রেণি বিভাজন: সমাজে উচ্চতর এবং সাধারণ শ্রেণি ছিল। সিটাডেলে উচ্চ শ্রেণি এবং নীচের শহরে সাধারণ মানুষের বসবাস ছিল।
সমতা ও শান্তি: সামগ্রিকভাবে সমাজ শান্তিপূর্ণ ছিল এবং সামরিক স্থাপনার প্রমাণ কম।
---
৪. ধর্ম এবং সংস্কৃতি:
ধর্ম: প্রকৃতি পূজা প্রচলিত ছিল। পশু এবং উদ্ভিদের পূজার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মূর্তিপূজা: ‘মা দেবী’ এবং পশুপতির মতো মূর্তিগুলি পাওয়া গেছে।
অলংকার ও সজ্জা: পুরুষ ও নারী অলংকার পরত। সিলমোহর এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে।
---
৫. লিপি এবং ভাষা:
লিপি: একটি চিত্রলিপি ব্যবহার করত, তবে এটি এখনো পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি।
ভাষা: তাদের ভাষার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।
---
৬. প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান:
ইঞ্জিনিয়ারিং: জলের মজুত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল অত্যাধুনিক।
মৃৎশিল্প: মৃৎপাত্রে নানা রকমের নকশা ও চিত্র আঁকা হত।
---
৭. প্রধান শহরগুলি:
হরপ্পা (পাঞ্জাব, পাকিস্তান)
মহেঞ্জোদারো (সিন্ধু, পাকিস্তান): এখানে বৃহৎ স্নানাগার (গ্রেট বাথ) এবং বিশাল শস্যাগার ছিল।
লোথাল (গুজরাট, ভারত): এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী।
কালীবঙ্গন (রাজস্থান, ভারত): এখানে চাষাবাদের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ধান্সা (হরিয়ানা, ভারত): এটি একটি ছোট শহর ছিল।
---
৮. পতনের কারণ:
হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভাব্য কারণগুলি হলো:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ভূমিকম্প)
জলবায়ুর পরিবর্তন
বৈদেশিক আক্রমণ
অর্থনৈতিক দুরবস্থা
---
উপসংহার:
হরপ্পা সভ্যতা তার সময়ের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত, যা নগর পরিকল্প
না, প্রযুক্তি, এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে উন্নত ছিল। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
বালুরঘাট দক্ষিন দিনাজপুর সাহায্য করেছেন কিরণ দেবনাথ এবং প্রমুখ
স্টুডেন্টদের জন্য বালুরঘাট অল গাইড গ্রুপ হোয়াটসঅ্যাপ লিংক নিচে রয়েছে সেখানে জয়েন হয়ে যাও।
Join my WhatsApp group. https://chat.whatsapp.com/KxB8vC7TZFCIFRhz36MVWq
Follow this link to join my WhatsApp group: https://chat.whatsapp.com/JDFfNVPIJrpCDnXm12sQQn
0 Comments