পণ্ডিতমশাই' উপন্যাসে শরৎচন্দ্র কুসুম চরিত্রটিকে এক স্বতন্ত্র নারী চরিত্র হিসাবে অঙ্কন করেছেন-আলোচনা করো।

 

'পণ্ডিতমশাই' উপন্যাসে শরৎচন্দ্র কুসুম চরিত্রটিকে এক স্বতন্ত্র নারী চরিত্র হিসাবে অঙ্কন করেছেন-আলোচনা করো।



📍YouTube channel link📍

https://youtube.com/@ksponlineclass?si=lwVmfHP_dBxOLWT_



দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে সবার প্রিয় কিরন দেবনাথের অনুরোধে অতি সংক্ষেপে এবং সহজে মনে রাখার উপায় শুধুমাত্র এই শরৎচন্দ্রের কুসুম চরিত্রটি


**কুসুম** চরিত্রটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'পন্ডিতমশাই' তে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরৎচন্দ্র তাঁর অন্যান্য রচনাতেও শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র নারী চরিত্র সৃষ্টিতে পারদর্শী ছিলেন, এবং কুসুম তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। 



**স্বতন্ত্র নারী চরিত্র হিসেবে কুসুমের বৈশিষ্ট্যসমূহ:**


1. **স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদা:** কুসুম চরিত্রটি তার স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদাবোধের জন্য প্রশংসিত। সে সমাজের প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলোকে মেনে চলার পরিবর্তে নিজের পথে চলতে পছন্দ করে।



2. **প্রেম ও দায়িত্ব:** কুসুম তার প্রেমের ব্যাপারে গভীর এবং আন্তরিক। সে তার প্রেমকে কোনো সামাজিক বন্ধন বা শর্তের সাথে জড়াতে চায় না এবং এই বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা স্পষ্ট।



3. **বিপ্লবী চেতনা:** কুসুমের চিন্তাধারা ও কাজকর্মের মধ্যে এক ধরনের বিপ্লবী চেতনা আছে। সে সমাজের প্রচলিত প্রথা ও নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করতে সাহসী এবং নিজের মতো করে জীবনযাপন করতে বিশ্বাসী।



4. **মমতা ও মানবতা:** 

কুসুমের মধ্যে গভীর মানবিকতা ও মমতার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। সে অন্যের দুঃখ ও কষ্টে সহমর্মিতা দেখায় এবং সাহায্য করতে চেষ্টা করে।

কুসুমের সাথে বৃন্দাবনের দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। তারপর একদিন নদী থেকে স্নান করে সিক্তবসনা কুসুমকে ফিরতে দেখে বৃন্দাবন মুগ্ধ হয়। বৃন্দাবন সৎ, ভদ্র, সংযত মানুষ হলেও কুসুমের অদ্ভুত সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়। এইভাবে কুসুমের আটপৌরে সাধারণ জীবনে এক অন্য অধ্যায়ের সূচনা হয়। বৃন্দাবন যেমন স্বামিত্বের দাবিতে কুসুমকে ফিরে পেতে চায়, কুসুমও তেমন তার দাবিকে অস্বীকার করতে পারে না। তার মধ্যে দু'টি সংস্কারের দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। সে বৈরাগীর বিধবা এটাও যেমন সত্য, অপরদিকে সে বৃন্দাবনের স্ত্রী এটিও সমান সত্য। সে শুধু বৃন্দাবনের স্ত্রী নয়, তার প্রতি শ্রদ্ধাও আছে কুসুমের। সবকিছুর টানাপোড়েনে তার হৃদয়ে যে দ্বন্দু দেখা দিয়েছে তার ঘাত-প্রতিঘাতে কুসুমের ব্যক্তিত্বময়ী আকর্ষণীয় রূপটি পরিস্ফুট করেছেন লেখক।


কুসুমের নারীসত্তা তাকে বৃন্দাবন সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। শিক্ষার গর্বে কুসুম বৃন্দাবনকে অপদার্থ জ্ঞান করে। কিন্তু সে বৃন্দাবনের পণ্ডিতমশাই পরিচয়ে যথার্থই বিস্মিত হয় এবং বৃন্দাবনের সাথে আলাপ-পরিচয়ে আনন্দ পায়। বৃন্দাবনের অপর স্ত্রীর ছেলেকে দেখে কুসুমের মাতৃসত্তা জেগে ওঠে। সে সারাজীবনই পুত্রসন্তানের জন্য লালায়িত। তাই বৃন্দাবনের ছেলেকে দেখে তার মনে হয়েছে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই সন্তান তার হতে পারত। কুসুম সেই তৃপ্তি লাভ করে বৃন্দাবনের পুত্র চরণের মুখ থেকে মাতৃসম্বোধন শুনে। এই মাতৃত্ববোধ কুসুমকে সব অভিমান ভুলে বৃন্দাবনের উপর ভরসা করতে শেখায়। সে কণ্ঠীবদলের ঘটনাটি ভুলে বৃন্দাবনের স্ত্রী হতে চেয়েছিল। এছাড়াও কুসুমের বধূসত্তাটি 'পণ্ডিতমশাই' উপন্যাসে সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। বৃন্দাবন যখন শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশের জন্য তাকে অভিসন্ধির সাহায্য নিতে বলে তখন তার বধূসত্তা আহত হয় ও তার আত্মাভিমান তাকে স্বামী-পুত্রের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু তার সব আত্মাভিমান দূরীভূত হয় যখন সে চরণের মুমূর্ষ অবস্থার কথা শোনে।



শরৎচন্দ্র কুসুম চরিত্রটি এমনভাবে গড়েছেন যে, সে তৎকালীন সমাজের নারীর চিত্রকে ভাঙতে সাহায্য করে। কুসুমের চরিত্রে শরৎচন্দ্র নারী স্বাধীনতা, স্বাবলম্বিতা, এবং সমাজে নারীর মর্যাদার গুরুত্ব প্রতিফলিত করতে চেয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments