দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের সবার প্রিয় কিরণ দেবনাথ,মিরময় বর্মন, সুশান্ত বর্মনের সাহায্যে ওয়েবসাইটে লেখা হলো ইলতুৎমিসের
ইলতুৎমিস ছিলেন দিল্লী সুলতানীর তৃতীয় সুলতান এবং তিনি গুলাম বংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুব উদ্দিন আইবকের জামাতা। তার শাসনামলে (১২১১-১২৩৬) দিল্লী সুলতানী শক্তিশালী এবং সুসংহত হয়েছিল। ইলতুৎমিসের অধীনে দিল্লী সুলতানীর সম্প্রসারণ ও দৃঢ়করণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। নিচে এর কিছু প্রধান দিক তুলে ধরা হলো:
### ১. সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ইলতুৎমিস বিভিন্ন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যের ভৌগলিক সীমা বৃদ্ধি করেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি:
- **বেঙ্গল ও বিহার দখল:** ১২২৫ সালে ইলতুৎমিস এই অঞ্চলগুলো জয় করেন এবং দিল্লী সুলতানীর অধীন করেন।
- **রাজস্থান ও মালওয়া:** ইলতুৎমিস রাজস্থান এবং মালওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো, যেমন রনথম্ভোর, গুজরাতের কিছু অংশ এবং রাজস্থানের চিতোর জয় করেন।
### ২. অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও প্রশাসন ইলতুৎমিস প্রশাসনিক কাঠামো মজবুত করেছিলেন। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি করেন এবং প্রশাসনিক বিভাগসমূহে পরিবর্তন আনে। তার শাসনামলে:
- **চালুস:** উচ্চপদস্থ সেনাপতি ও রাজ্যপালের দায়িত্ব ছিল, যারা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ দেখাশোনা করতেন।
- **ইক্তা ব্যবস্থা:** জমি করের ভিত্তিতে জমিদারী ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা সামরিক কর্তাদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করে।
### ৩. মুদ্রা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সংস্কার ইলতুৎমিস দিল্লী সুলতানীর মুদ্রা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনেন। তিনি:
- **তাঁবিল ও জিতাল প্রচলন:** তাম্র এবং রৌপ্যমুদ্রা চালু করেন, যা দিল্লী সুলতানীর অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে মজবুত করেছিল।
- **ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার:** তার শাসনামলে দিল্লী সুলতানীতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয়েছিল, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছিল।
### ৪. সাংস্কৃতিক অবদান ইলতুৎমিস দিল্লী সুলতানীর সাংস্কৃতিক দিকেও অবদান রেখেছিলেন।
তার শাসনামলে: - **কুতুব মিনার সম্পূর্ণকরণ:** ইলতুৎমিস কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, যা আজও ভারতের অন্যতম প্রতীকী স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়।
- **মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মাণ:** তিনি শিক্ষা ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলির উন্নয়নেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
### ৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইলতুৎমিস দক্ষ রাজনীতি ও কূটনীতি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্র দমন করেন। তিনি নিজেকে সুলতানী ক্ষমতার বৈধ উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন, যা দিল্লী সুলতানীর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিল।
এই কারণেই ইলতুৎমিসের শাসনামলকে দিল্লী সুলতানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগ হিসেবে গণ্য করা হয়। তার নেতৃত্বে সাম্রাজ্য সুসংহত এবং সম্প্রসারিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সুলতানী যুগের অন্যান্য শাসকদের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।
0 Comments