নীলদর্পণ' নাটককে যথার্থ ট্রাজেডি বলা যায় কিনা আলোচনা কর।

 দক্ষিণ দিনাজপুর জেলের প্রশ্ন উত্তর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

                        2023

     Department of Bengali (UG&PG)

                     emester - 2

            Internal Assessment

        Paper-203 LC1 MIL BNGG




নীলদর্পণ' নাটককে যথার্থ ট্রাজেডি বলা যায় কিনা আলোচনা কর।

                    অথবা


ট্রাজেডি হিসেবে নীল দর্পণ নাটকের সার্থকতা বিচার কর।



ভূমিকা:

দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘নীল দর্পণ’(১৮৬০) বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম নাটকের কাহিনি,আঙ্গিক পরিকল্পনা,ঘটনা, গঠনবিন্যাস-এসব বিচারে ‘নীল দর্পণ’ একটি সফল নাটক। এখানে ট্রাজেডি হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই 'নীলদর্পণ' নাটকটি। এই নাটকটি যে শুধুমাত্র মনের ভাবকে প্রকাশ করেছে তাই নয় কবি যে কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি সেসময়ের নির্মম হাহাকার পরিস্থিতিতে কবি তার নাটকে কষ্টকর বেদনাদায়ক এবং নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেছেন কবি দীনবন্ধু মিত্র।
ট্র্যাজেডি হলো এমন এক ধরণের আচরণের অনুকরণাত্মক রচনা যা হয় গুরুগম্ভীর স্বয়ং সম্পূর্ণ, আদি-মধ্য-অন্ত বিশিষ্ট কাহিনি ব্যক্তি। যুক্ত। শুধু তাই নয় এর সংলাপ হবে আকর্ষনীয় এবং যথাযথ। ট্র্যাজেডি নায়ক কেন্দ্রিক রচনা, তাই নাটকে সমস্ত ক্রিয়ার ফলভোগী (doing and তিনি Suffering) হবেন নায়ক। তাঁকে কেন্দ্র করে দর্শক হৃদয়ে জাগবে Pity এবং fear ভাব অর্থাৎ সহবেদনা এবং ভয়। নাটকের শেষে থাকবে ক্যাথারসিস বা ভাববিমোচন। সার্থক গ্রীক ট্র্যাজেডিতে নায়কের ট্র্যাজিক পরিণামের জন্য দায়ী 'নেমেসিস'- অপ্রাপণীয় দুর্ভাগ্যের শিকার হন তিনি।

‘নীলদর্পণ' নাটকের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করলে বলা যায় ট্র্যাজেডির উপকরণ এ নাটকে প্রভূত পরিমাণে রয়েছে। স্বরপুর গ্রামের বসু ও ঘোষ পরিবারের উপর নীলকর সাহেবদের নির্মম অত্যাচারের বিবরণ প্রদান প্রসঙ্গে | মাঝে মাঝেই নাট্যকার জানিয়েছেন আরো বহু মানুষের উপর নীলকরদের আরোপিত ব্যবস্থা মাৎস্যনায়। ইংরেজী নাট্যাদর্শের অনুসরণে মুখ্যত বিন 'নীলদর্পণ' নাটকের পাঁচটি অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্কে গোলোক বসু ও সাধুচ ঘোষের কথাবার্তায় দেশে নীলকরদের বীভৎসতা বিম্বিত হয়েছে। দেশে মায়া ত্যাগ করার কথাও উঠেছে এরই মধ্যে কিন্তু পিতৃ পুরুষের ভিটে মাটি প্রতি টান তাতে বাদ সেধেছে। মাটির প্রতি গভীরতর ভালোবাসা না থাকা কাউকে চাষী বলা যায় না, রাইচরণ চাষী তার সাঁপোল তলার জমিতে নীলে দাগ দেওয়ায় তার মনে হয়েছে কেউ বিদে কার্তি পুড়িয়ে তার বুকে বিঁধি দিয়েছে। প্রতিবাদ করায় রাইচরণকে অভুক্ত অবস্থায় বহু লাঞ্ছনা দিয়ে তৃয়া জলটুকু খাবার সুযোগ দিয়ে চোরের মত বাড়ি থেকে বেঁধে নিয়ে গেছে। তা ভাই সাধুচরণ, এমন কি নবীনমাধব ও দুই ভাইকে রক্ষা করতে গিয়ে চরা অপমানিত হয়েছে। নবীনমাধবের আচরণে ক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নীলকরেরা তাঁর বিরুদ্ধে রুজু করে মিথ্যা ফৌজদারী মামলা। একদিকে অর্থকষ্ট অন্যদিকে পিতার অপমান মুষড়ে দিয়েছে নবীনমাধবকে। এরই মধ্যে কুঠিয়াল রোগ সাহেবের আর একটি রোগ ধরা পড়ে। লম্পট রোগ সাহেব আপন ইন্দ্ৰিয় বাসন চরিতার্থ করার জন্যে পদীময়রাণীকে দিয়ে সাধুচরণের বিবাহিতা গর্ভবতী কন্য ক্ষেত্রমণিকে ধরে আনায় নবীনমাধব তোরাপের সহায়তায় কামরাঙ্গা কুঠি থেকে উদ্ধার করে তাকে রক্ষা করে তার সতীত্ব। চতুর্থ অঙ্কে দেখা যায় অত্যাচারের চরমতা। হাজত ঘরে গোলোক বসু উদ্ধোধনে আত্মহত্যা করেন। তাঁর শ্রাদ্ধের দিন বসুদের পুকুর পারে নীল বুনতে আসে নীলকর সাহেবরা দলবল নিয়ে। বাধা দিতে গিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হন নবীনমাধব। অতঃপর দুঃখের পরিণামই এ নাটকে প্রাপ্তি। মেলে মৃত্যুর ছড়াছড়ি। উন্মত্তা সাবিত্রী গলা টিপে হত্যা করেন পুত্রবধূ সরলতাকে। জ্ঞান ফিরলে নিদারুণ অনুতাপের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয় মারা যায় ক্ষেত্রমণিও শয্যা কন্টকীতে। অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বিচার করলে বলা যায়:

অষ্টাদশ শতকের শেষে দুই দশক এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের জটিলতর আর্থ-সামাজিক সমস্যা নিয়ে গড়ে উঠেছে দীনবন্ধুর 'নীলদর্পণের' কাহিনি অংশ তাই নিঃসন্দেহে এ কাহিনি গুরু গম্ভীর এবং এর কাহিনি একমুখিন।

S নীলদর্পণের কাহিনি আদি মধ্য অন্ত বিশিষ্ট মূল কাহিনিতে আদি অংশটি প্রায় নেয় বললেই চলে সাধুচরণ ও গোলোক বসুর কথাবার্তায় প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে এর আভাস আছে মাত্র। 'নীলদর্পণ' নাটকের মধ্য অংশের ও সূচনা নাটকের পূর্ব থেকে মধ্য অংশের এবং অন্ত অংশের কাহিনি নাটক বিধৃত হয়েছে।

ও অ্যারিস্টটল জানিয়েছেন ট্র্যাজেডি নায়ক নির্ভর কাহিনি। 'ট্র্যাজেডির নায়ক হয়ে থাকে উচ্চ বংশোদ্ভূত ধীর, বীর ও সহসী পরোপকারী স্বরপুর বৃকোদর নবীনমাধবের চরিত্রে এ সব লক্ষ্যই আছে।

 নাটকের অন্তিম দৃশ্যে পরিলক্ষিত হয় মৃত্যুর সমারোহ যা দর্শক ও পাঠক মনকে করুণ্যে বেদনায় অভিভূত হয়। তথাপি এই মৃত্যুদশা ঠিক সম্ভাব্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেনি। অ্যারিস্টটলের উক্তি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়—রসসৃষ্টিরও দিক থেকে এই নাটকের উপসংহার সম্পূর্ণ বিশ্বাস্যও অপরিহার্য নয়। “সুতরাং ‘নীলদর্পণ' নাটকের যে গৌরবই প্রকাশ পাক ইহার মধ্যে ট্র্যাজেডির সৃষ্টির প্রয়াস যে সার্থকতা লাভ করতে পারে নাই তাহা অস্বীকার করা যায় না। ইহা সাধারণ বিয়োগান্তক নাটক মাত্র।”

📚ইতিহাস সাজেশন:-https://youtu.be/sg1d1Id7L68

📚 বাংলা সাজেশন:-https://youtu.be/aR94GtRI46M

Post a Comment

0 Comments