ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো

অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কোশ্চেনটি এবং এটি তো তোমাদের সাজেশনে থাকলোই তাছাড়াও এটি তোমাদের প্রজেক্টেও আসবে।



* ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো।


অথবা, ভারতের শাসন ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো।


অথবা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাজগুলির বিবরণ দাও ও তাঁর সাংবিধানিক ভূমিকা ব্যাখ্যা করো। অথবা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।



*প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ও কার্যাবলী:-

ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই প্রকৃত শাসক। সংবিধানের ৭৫(১) নং ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে—


[1] লোকসভার নেতা:-


i. লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ii. লোকসভার কার্যক্রম তিনি স্থির করেন। প্রধানমন্ত্রী লোকসভার


কার্যপরিচালনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।


iii. লোকসভার অধিবেশন কখন ডাকা হবে, কতদিন চলবে, কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর আলোচনা চলবে সে-সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত নেন। অধিবেশন স্থগিত রাখা বা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন।


iv. প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে লোকসভায় সরকারি নীতিগুলি ব্যাখ্যা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলের ওপর বক্তৃতা ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করাও তাঁর প্রধান দায়িত্ব। কোনো মন্ত্রী লোকসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে অসুবিধায় পড়লে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।


v. সংসদে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার


সম্পর্ক রেখে চলেন। vi. লোকসভা পরিচালনা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্পিকারকে সাহায্য করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য।


2] মন্ত্রীসভার নেতা:-


. সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রীসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা চূড়ান্ত। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে 'সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য' বলে অভিহিত করলেও, এটা দেখা যায় যে, মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।


i. মন্ত্রীসভার পুনর্গঠন, দফতর বণ্টন এবং পুনর্বণ্টন প্রভৃতির ব্যাপারে


প্রধানমন্ত্রীর প্রভূত ক্ষমতা লক্ষ করা যায়। iii. মন্ত্রীসভায় সভাপতিত্ব এবং বিভিন্ন দফতরের নীতির সমন্বয়সাধন করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য ।


iv. মন্ত্রীসভার কাজকর্ম পরিচালনার জন্য যে সচিবালয় থাকে তা প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীনে কাজ করে।


v. মন্ত্রীসভার একাধিক স্থায়ী বা অস্থায়ী কমিটি নিয়োগের ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। অধিকাংশ কমিটির সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রী। 


vi. মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত ক্ষমতা হল, তিনি যে-কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন বা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে পচ্যুত করাতে পারেন। এককথায়, প্রধানমন্ত্রীর অপ্রিয় কোনো সাংসদ মন্ত্রীসভায় টিকে থাকতে পারেন না। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে বাজপেয়ী মন্ত্রীসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রাম জেঠমালানির বা মনমোহন সিংহ মন্ত্রীসভায় নটবর সিংহ বা ও রাজার পদচ্যুতির কথা উল্লেখ করা যায়।


[3] সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা: প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা হিসেবে কাজ করেন। লোকসভার ভেতরে ও বাইরে তাঁকে দলের বা জোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে হয়। দল বা জোটের ঐক্য এবং সংহতি অটুট রাখা তাঁর দায়িত্ব। দল বা জোটের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকারি কাজকর্মের মাধ্যমে রূপায়ণ করার ব্যাপারে তাঁকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। দলের বা জোটের জনপ্রিয়তা রক্ষা ও বৃদ্ধি করার দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে। নির্বাচনে দল বা জোটের সাফল্যের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল।


[4] রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা: প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা | প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর | রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে সরকারের উচ্চপদাধিকারীদের নিয়োগ করেন। দেশের সমগ্র শাসনব্যবস্থা কার্যত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির নামে পরিচালিত হয়।, সংবিধানের ৪২তম এবং ৪৪তম সংশোধনের ফলে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য।


[5] পররাষ্ট্রনীতির রূপকার: প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রনীতির প্রধান রূপকার।আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সদর্থক ভূমিকা অবলম্বনের প্রধান দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। কমনওয়েলথ সম্মেলন, জাতিপুঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন,নির্জোট নেতাদের সম্মেলন এবং সার্ক বা আসিয়ানের মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যায় ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তিনি ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া বিশেষ দূত হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে

তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়োগ করতে পারেন।


[6] জাতির নেতা: প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির নেতা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা বিশ্লেষণে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা জনমতের উপলব্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং ভূমিকা হিসেবে পালন করে থাকেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা উপর সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।


*উপসংহার:-ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জোট সরকারের চল শুরু হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাও কার্যাবলী তার বিক্ষন্নতা সময় সাধনকারী নেতৃত্বও যোগ ব্যক্তিত্বের উপর বহুলাং সে নির্ভরশীল হয়েও পড়েছে।

Post a Comment

0 Comments