পুরাণ (প্রাচীন ভারতের)
![]() |
পুরাণ |
**পুরাণ হলো- হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ সমুচ্চয়। পুরাণে সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, রাজন্যবর্গ, যোদ্ধৃবর্গ, ঋষি ও উপদেবতাগণের বংশবৃত্তান্ত এবং হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, দর্শন ও ভূগোলতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।
**প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় পুরাণের স্থান মুখ্য না হলেও একেবারে অগ্রাহ্য নয় ৷ তৎকালীন ভারতের এমন অনেক রাজবংশ আছে যেগুলির বিবরণ পুরাণগুলিতে বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, পুরাণে অতীতের ঘটনাসমূহ লিপিবদ্ধ হয়েছে ভবিষ্যৎ কালে। প্রত্নতাত্ত্বিক ও অন্যান্য সাহিত্যিক উপাদান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনেক সময় পুরাণ কর্তৃক সমর্থিত হয়। তবে কেবল পুরাণের ওপর নির্ভর করে ইতিহাস রচনা সমীচীন হবে না। কারণ বিভিন্ন সময়ে এগুলির মধ্যে নানা পরিবর্তন ঘটেছে। এককথায়, পুরাণ হল প্রাচীন কাহিনীর সমন্বিত রূপ। ধর্মীয় অনুশাসনের কথা এগুলিতে স্থান পেয়েছে। পুরাণের মোট সংখ্যা ১৮। ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে সমস্ত পুরাণগুলি অবশ্য সমান মূল্যবান নয়। ইতিহাস রচনার কাজে যে সমস্ত পুরাণগুলি থেকে সাধারণত তথ্য আহরণ করা হয়, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিষ্ণুপুরাণ', 'বায়ুপুরাণ', 'মৎস্যপুরাণ',ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ', 'গরুড় পুরাণ' এবং 'ভবিষ্য পুরাণ'। পুরাণ বা মহাপুরাণগুলি ছাড়াও আরো বেশ কিছু ক্ষুদ্র পুরাণ আছে যেগুলি উপপুরাণ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। বাস্তবে এগুলির সংখ্যা প্রায় একশো। ইতিহাস রচনার কাজে লাগে এমন কয়েকটি উপপুরাণ হল ‘বৃহন্নারদীয়’, ‘বৃহদ্ধর্ম' ও 'কালিকা পুরাণ'। পুরাণগুলি ঠিক কখন রচিত হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা না গেলেও একথা বলা যেতে পারে যে, এখন যে পুরাণগুলি আমরা ব্যবহার করে থাকি সেগুলির রচনাকাল আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। পুরাণ কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ইতিহাস রচনার কাজে ব্যবহৃত হয় তার কয়েকটি উদাহরণ এখানে রাখা যেতে পারে। মৌর্যবংশের জন্য এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উপাদান হল বিষ্ণুপুরাণ। অন্ধ্র বা সাতবাহনদের ইতিহাস বোঝার জন্য মৎস্যপুরাণ এবং গুপ্তবংশের আদি বাসস্থান ও প্রারম্ভিক পর্বের ইতিহাস জানার জন্য বায়ুপুরাণের ওপর সাধারণত নির্ভরশীল হতে হয়। কোনো কোনো পুরাণে শাসকদের নামের তালিকার শেষে আভীর, শক, যবন, হুণ প্রভৃতি বিদেশীয় বংশের তালিকা লিপিবদ্ধ হয়েছে। প্রাচীন ভারতবর্ষের ভৌগোলিক ইতিহাস রচনার কাজে পুরাণগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারণ, পুরাণগুলিতে যে সমস্ত নদী, পর্বত, শহর ও নগরের উল্লেখ রয়েছে সেগুলি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করে। তবে পুরাণের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল এই যে, এতে বর্ণিত বেশিরভাগ ঘটনাই পুরাকাহিনী বা গল্পের পর্যায়ে পড়ে। পুরাণের কিংবদন্তীতে যে সমস্ত ধর্মীয় বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়। পুরাণে উল্লেখিত বিভিন্ন রাজবংশের সন-তারিখ নিয়ে প্রায়শই সমস্যা দেখা দেয়।
**রাজনৈতিক দিক ছাড়াও আর্থ-সামাজিক ইতিহাস রচনায় পুরাণগুলির ভূমিকা নগণ্য নয়। উল্লেখ্য, পুরাণে বর্ণিত কলিযুগের সূত্র ধরে প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো অনুধাবনে প্রয়াসী হয়েছেন এক শ্রেণীর পণ্ডিত। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন রামশরণ শর্মা। বস্তুত, পুরাণগুলি রচিত হয়েছিল সমকালীন আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এবং পুরাণ রচয়িতাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। স্বাভাবিকভাবেই সমকালীন সমাজের সার্বিক চিত্র এগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায় বহু বর্ণ-উপবর্ণের নাম, নারী জাতির অবস্থান এবং কলিযুগ সম্পর্কে এক স্বচ্ছ ধারণা পুরাণগুলিতে উপস্থাপিত হয়েছে। তথাপি মনে রাখা দরকার পুরাণগুলিতে লিপিবদ্ধ তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট। এগুলিতে কোনো অলীক কাহিনীর লিপিবদ্ধকরণও অসম্ভব নয়। তাই পুরাণের তথ্যগুলি খুব সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক অথবা কোনো নির্ভরযোগ্য সাহিত্যিক উপাদানের সাহায্যে পুরাণে উল্লেখিত তথ্যগুলি যাচাই করে নিতে হয়।
**ভালো লাগলে বন্ধুরা তোমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তোমরা youtube চ্যানেলে ঢুকো এবং সেখান থেকে তোমরা সমস্ত রকম চাকরি-বাকরির আপডেট পেয়ে যাবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের নাম:- KSP Online Class
0 Comments