বাংলা গদ্যের বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনের ভূমিকা আলোচনা করো

 বাংলা গদ্যের বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনের ভূমিকা আলোচনা করো 


•ভূমিকা:-

শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা হয় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে কয়েকজন ইংরেজ মিশনারি বাংলাদেশী খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য সচেষ্ট হন তাদের নির্দেশে উইলিয়াম কেরি টমাস নামে দুইজন ব্যক্তি বাংলাদেশ প্রেরিত হন এরা মূলত কলকাতা কি প্রচার কেন্দ্র রুপে বেছে নিলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের প্রতিকূলতার জন্য কলকাতার আদুরে দিনে মারে কেন্দ্রে শ্রীরামপুর মিশন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াল্ড মাক্স ম্যান এবং অন্যান্য মিশনারিরা এদের সঙ্গে যোগদান করেছিলেন। তবে এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠার ২০০ বছর পূর্বেই বাংলাদেশে কৌতুক গিজ মিশনারীদের আগমন ঘটেছিল।




বাইবেলের অনুবাদ:

 তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এদেশে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করা। মূলত একমাত্র প্রধান উদ্দেশ্যই তাদের ধর্মচ্যুত করা।

প্রকৃতপক্ষে এঁরা শুধু বাইলের অনুবাদ করেন নি, সংস্কৃত ব্যাকরণ অভিধান (বোপদেবের ‘মুগ্ধবোধ', কেরী সাহেবের 'Sanskrit Grammar', কোলব্রুক সম্পাদিত 'অমরকোষ'), কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীদাসী মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ ছাপার অক্ষরে প্রচার করে বাংলা গদ্য সাহিত্যের অশেষ উপকার করেছিলেন। এছাড়াও বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণ, নানা শাস্ত্র, 'সমাচার দর্পণ" নামে সাপ্তাহিক এবং 'দিগদর্শন' নামে মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন। অবশ্য প্রকাশনার পশ্চাতে Old Testament এর সম্পূর্ণ এবং New Testa ment এর খানিকটা অনূদিত হয়। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বাইবেল ধর্মপুস্তক নামে প্রকাশিত হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে কেরী St. Matthew's Gospel এর বাংলা অনুবাদ 'মঙ্গলসমাচার মাতিউর রচিত' নামে প্রকাশ করেছিলেন। সে যাই হোক, কেরী সাহেবের বাইবেলের বাংলা অনুবাদ তুচ্ছ হলেও বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে এই প্রাতঃস্মরণীয় মিশনারীরা বাংলা গ্রন্থাদি প্রচার করে বাঙালী জাতির উপকারই করেছিলেন। এখানেই বাংলা গদ্যের ইতিহাসে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।


 •মিশনারীদের মূল উদ্দেশ্য:-

 তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এদেশে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করা। মূলত একমাত্র প্রধান উদ্দেশ্যই তাদের ধর্মচ্যুত করা। তাঁরা মনে করেছিলেন, বিদেশী ভাষায় লেখা বাইবেলকে দেশীয় ভাষায় লিখে বাঙালীর হাতে পৌঁছে দিলে তারা নিজেদের ধর্ম পরিত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে ধর্মে ধর্মান্তরিত হবে। শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠার পর কেরী ও তাঁর সহকর্মীরা দেশীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের আশা তাঁদের ভগ্নোৎসাহী করে তুলেছিল। এত পরিশ্রম ও অর্থব্যয়ের তুলনায় খ্রিস্টান ধর্মান্তরীকরণ অতি শিথিল গতিতে অগ্রসর হয়েছিল। তবে বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিশেষত গদ্য ভাষার বিবর্তনের ইতিহাসে এঁদের এবং এই প্রতিষ্ঠানের দান স্বীকার করতেই হবে। ১৮৩৪ সালে কেরী ও ১৮৩৭ সালে মার্শম্যানের মৃত্যুতে শ্রীরামপুর মিশনের অস্তিত্ব নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।


•উপসংহার:-

সর্বোপরি বলা যায় যে ইংরেজরা খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য যে খ্রিস্ট মিশনারিরা তাদের দীর্ঘ প্রয়াস চালিয়েছিল তা কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল তবে বলা যায় যে তাদের এদেশে আসার বিভিন্ন কারণ ছিল তার মধ্যে এই কারণটি অন্যতম একটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

Post a Comment

0 Comments