প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের লেখমালার ভূমিকা আলোচনা করো। অথবা লিপি সম্পর্কে আলোচনা করো।




 **প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগ লেখমালার ভূমিকা।


•ভূমিকা:-

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে রচনায় লেখমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রাচীন ভারতের লুপ্ত ইতিহাস যতটা উদ্ধার করা হয়েছে আমরা ততটাই লেখো মালার কাছে ঋণী। •সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথা-ডিগবিজয়, ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, শাসন পরিচালনা প্রভৃতি হয়ে রয়েছে প্রধানত শিলা লেখ গুলিতে।



• লেখমালার বিস্তারিত বিবরণ:-

লেখমালায় কি ধরনের ভাষা ব্যবহৃত হত সে-সম্পর্কে এখন আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমেই জেনে রাখা দরকার যে, হরপ্পা সভ্যতার লেখমালাগুলির ভাষা ও লিপি সম্বন্ধে এখনও আমরা অজ্ঞাত এই কারণে সেখানে প্রাপ্ত অসংখ্য লেখমালার পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি। এই শিলালেখগুলি বাদ দিলে বলা যায় যে, ভারতীয় লেখমালা প্রাকৃত, সংস্কৃত, মিশ্রিত উপভাষা (mixed dialect) ও নানা আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত। অল্প কিছু লেখ পাওয়া গেছে যেগুলি বিদেশীয়, বিশেষ করে গ্রীক বা আরামীয় ভাষায় রচিত। এখানে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন সময়ে লেখগুলিতে কোনো নির্দিষ্ট ভাষায় লেখার রেওয়াজ ছিল। যেমন—খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে যে লিপিগুলি খোদাই করা হয়েছিল তার ভাষা ছিল প্রাকৃত। মৌর্য সম্রাট অশোকের লেখমালা এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর কয়েক শতাব্দী পর খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে লিপি খোদাইয়ের কাজে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহৃত হতে থাকে। এরপর গুপ্ত যুগে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে এ ব্যাপারে সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃত ভাষার প্রচলন অনেকটা ম্লান হয়ে পড়ে। তবে তখন যে প্রাকৃত ভাষা একেবারে ব্যবহৃত হত না, সে-কথা বলা যাবে না। এরপর খ্রিস্টীয় নবম-দশম শতাব্দী থেকে শিলালিপি রচনার কাজে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা, যথা— সংস্কৃত, তামিল, তেলেগু প্রভৃতি ব্যবহৃত হতে থাকে। অবশ্য প্রাক্-মধ্যযুগের লেখমালায় আরবী ভাষার প্রথম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।


*লেখগুলিতে ব্যবহৃত লিপি বা বর্ণমালার প্রসঙ্গে এখন আসা যাক। প্রাচীন ভারতীয় ভাষায় রচিত লেখগুলি ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী, ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী অক্ষরযুক্ত 'বিমিশ্রিত’ লিপি, তথাকথিত শঙ্খলিপি এবং ব্রাহ্মী থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন আঞ্চলিক লিপিতে লেখা। অশোকের শিলালিপিগুলি উত্তর-পশ্চিম ভারতের কয়েকটি এলাকা ছাড়া প্রধানত ব্ৰাহ্মী লিপিতেই লেখা। আবার স্থানীয় অধিবাসীদের সুবিধার জন্য সেখানে খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহৃত হয়েছিল। আফগানিস্তানে অশোকের সময় উৎকীর্ণ শিলালিপিগুলি গ্রীক ও আরামাইক বর্ণমালায় রচিত হয়েছিল। তবে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্ৰাহ্মীই ছিল প্রধান ব্যবহৃত লিপি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্রাহ্মী লিপি লেখা হত বাঁ দিক থেকে ডান দিকে। আর খরোষ্ঠী লিপি ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লেখা হত। শঙ্খ লিপি পাঠ করতে গেলেও অনেক সময় ডান থেকে বাম দিকে পড়তে হয়। প্রায় সমগ্র এশিয়াতেই এই লিপির প্রচলন ছিল।


*প্রধানত প্রাকৃত ভাষায় ও ব্রাহ্মী লিপিতে উৎকীর্ণ অশোকের শিলালেখগুলি প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার কাজে অদ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল'-এর সম্পাদক জেমস প্রিন্সেপ কর্তৃক অশোকের লিপির পাঠোদ্ধারের পর প্রত্নতত্ত্ব তথা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, সাহিত্যিক সূত্র থেকে অশোকের সম্বন্ধে যে তথ্য পাওয়া যায় তা তাঁর মানবধর্মী ও বিশ্বজনীন ক্রিয়াকলাপের সম্যক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে অক্ষম। তাঁর ধর্মমত ও জনহিতকর কার্যকলাপ সম্পর্কে জীবন্ত চরিত্র প্রদান করে থাকে তাঁর শিলালেখগুলি। প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার কাজে অশোকের শিলালেখগুলি এক মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল। অশোকের পরবর্তীকালের শিলালেখগুলিকে সাধারণত সরকারি ও বেসরকারি-


*এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ইতিহাস সম্পর্কিত জ্ঞানের আকর হিসাবে এই লেখগুলির মূল্য অপরিসীম। সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করলে এগুলি থেকে কেবল যে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিক পরিস্ফুট হয় তাই নয়, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ক ধ্যানধারণারও পরিচয় মেলে এগুলি থেকে। সরকারি লেখগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রশস্তি। এর আর একটি অংশকে বলা হয় ভূমিদানপত্র। প্রশস্তি রচনার পিছনে সাধারণত রাজপরিবারের প্রেরণা কাজ করে থাকে। এই জাতীয় উপাদানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেণ রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি। এর কিছু অংশ ভেঙে গেলেও সংস্কৃত ভাষায় রচিত তেত্রিশ লাইনের এই প্রশস্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর থেকে কেবল যে সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ের বর্ণনাই পাওয়া যায় তাই নয় ; গুপ্তযুগের ও তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক চিত্রও প্রতিভাত হয়ে ওঠে। মধ্যভারত ও রাজস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকায় যে তখন প্রজাতান্ত্রিক উপজাতীয় শাসন বলবৎ ছিল এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যবাদের আঘাতে যে তা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল তা এই প্রশস্তি থেকে বোঝা সম্ভবপর হয়। উদাহরণ হিসাবে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশস্তির কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা সমীচীন হবে এবং তা হল চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল প্রশস্তি।

* আনুমানিক ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে উৎকীর্ণ আইহোল প্রশস্তিতে সভাকবি রবিকীর্তি দ্বিতীয় পুলকেশী কর্তৃক উত্তর ভারতের সমকালীন প্রভাবশালী শাসক হর্ষবর্ধনের পরাজয়ের কথা সযত্নে তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার, এই জাতীয় শিলালেখ তথা প্রশস্তিতে কিছু অতিশয়োক্তি থাকে। রাজকীয় শাসনব্যবস্থার অহেতুক প্রশংসা কিংবা গুণগানে এগুলি অনেক সময় মুখরিত হয়। শাসকদের দুর্বলতার কথা এগুলিতে সযত্নে পরিহার করাও অবিশ্বাস্য নয়। তবে মিথ্যাভাষণ বা অতিরঞ্জনদোষে দুষ্ট হলেও এর ফলে লেখর গুরুত্ব বিশেষ হ্রাস পায় না। কারণ, যে বিশেষ উদ্দেশ্যে রাজা বা রাজপুরুষেরা প্রশস্তিগুলি লেখাতেন সেই উদ্দেশ্য বা লিপিবদ্ধ ঘটনার কোনো পরিবর্তন হয় না, অতীতের নীরব সাক্ষী হয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে এগুলি আজও ইতিহাস রচনায় আমাদের সাহায্য করে থাকে।

ভারতের কৃষি-অর্থনীতি বোঝার ক্ষেত্রে এগুলি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল।


প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বেসরকারি লেখগুলিও বিশেষভাবে সাহায্য করে। থাকে। বেসরকারি লেখমালা বলতে সেই সমস্ত লেখগুলিকে বোঝায় যেগুলি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সরকারি এক্তিয়ারের বাইরে প্রচারিত হত। সাধারণত দেবদেবীর মূর্তি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গায়ে এই জাতীয় লেখগুলি খোদাই করা থাকত। ধর্ম ও শিল্পকলার ইতিহাস বুঝতে গেলে এগুলির সাহায্য অবশ্যম্ভাবী। প্রাচীন ভারতের সাহিত্যগত ইতিহাস বোঝার জন্যেও এগুলি প্রয়োজন। যেহেতু এগুলি অনেক সময় উচ্চ প্রশাসনিক পদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা প্রচারিত হত সেহেতু রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিচ্ছবিও পাওয়া যায় এগুলি থেকে। আবার এমন কিছু লেখ আছে যেগুলি উচ্চশ্রেণীর সাহিত্যের পর্যায়ে পড়ে। পূর্বে উল্লেখিত হরিষেণ রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি ও রবিকীর্তির আইহোল প্রশস্তি এর চরম দৃষ্টান্ত। এছাড়া তামিলনাড়ুর কুভুমিয়ামালাইয়ে সঙ্গীতের স্বরলিপি, রাজস্থানের উদয়পুরে নানা সর্গে বিভক্ত রাজপ্রশস্তি কাব্য এবং আজমীরে 'ললিত বিগ্রহরাজ' ও 'হরিকেল' নাটক উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে।

তাম্রশাসনগুলিও সরকারি লেখর পর্যায়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাম্রশাসনগুলি খোদিত হত তাম্রফলকে। জমি বিক্রি বা জমিদান সংক্রান্ত বিষয় এগুলিতে লিপিবদ্ধ থাকত। এছাড়া ভূমিদানের উদ্দেশ্য, ভূমি-রাজস্ব এবং ভূমি সংক্রান্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে তাম্রশাসনগুলি। রাজা বা রাজস্থানীয় কোনো মানুষ কোনো ব্যক্তি বা ধর্মীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভূমিদান করলে তা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করত। এরই ফলস্বরূপ ঐ ধরনের লেখ উৎকীর্ণ হত, যা তাম্রশাসন নামে পরিচিত। কিছু কিছু তাম্রশাসনে রাজকীয় প্রশস্তির কথাও পাওয়া যায়। এই ধরনের তাম্রশাসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গৌড়রাজ শশাঙ্কের এগরা (মেদিনীপুর জেলা) তাম্রশাসন। ভূমিদান সংক্রান্ত বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে এতে বেশ কিছু উচ্চ অভিধার সমন্বয়ে রাজা শশাঙ্কদেবের উল্লেখ করা হয়েছে। জমি বিক্রয় ও জমিদানের মাধ্যমে তাম্রশাসনগুলি জমি হস্তান্তরের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জমি ও জমি মাপার পদ্ধতির কথাও এগুলি থেকে জানা যায়। এক্ষেত্রে গুপ্ত আমলে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত যথা দামোদরপুর, বৈগ্রাম, পাহাড়পুর ও ফরিদপুরে প্রাপ্ত তাম্রশাসনগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাজনৈতিক অবস্থা বা পরিস্থিতি বোঝার ব্যাপারেও তাম্রশাসনগুলি অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। এই প্রসঙ্গে শশাঙ্কের রাজত্বের উনিশ বর্ষে উৎকীর্ণ একটি (মেদিনীপুরের দক্ষিণাংশে দণ্ডভুক্তি জনপদের অন্তর্গত) তাম্রশাসনের কথা উল্লেখ করা যায়। এই তাম্রশাসনটি থেকে বোঝা সম্ভব হয় যে, ঐ সময় পর্যন্ত বাংলায় শশাঙ্কের প্রভাব-প্রতিপত্তিতে কোনো ছেদ পড়েনি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাম্রশাসনগুলি একদিকে যেমন শাসকের কার্যাবলীর বিস্তৃত বিবরণ দেয় অপরদিকে তেমনি প্রাচীন বাংলা তথা ভারতের কৃষি-অর্থনীতি বোঝার ক্ষেত্রে এগুলি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল।

এতক্ষণ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় কোন্ ধরনের লেখ কিরকম সাহায্য করে থাকে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিস্তৃত আলোচনা করা হল। এখন সামগ্রিকভাবে এর গুরুত্ব কতখানি সে-বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কোনো লেখ যদি তারিখ সম্বলিত হয় তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট লেখতে উল্লেখিত রাজার সময়কাল নির্ধারণ করা সহজ হয়। বিভিন্ন শাসকের রাজত্বকালের যে সময়সীমা আমরা নির্ধারণ করে থাকি তা অনেক সময় লেখ-য় উৎকীর্ণ তারিখের ভিত্তিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। যদি লেখ-য় কোনো তারিখ না থাকে অথবা কোনো কারণে তারিখ সংলগ্ন অংশটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলেও ইতিহাস রচনার কাজে তার অবদান মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। কেননা, সেই লেখটিতে উল্লেখিত রাজার নাম, পূর্বপুরুষদের পরিচয় ও বংশতালিকা, তাঁর কর্মকাণ্ড, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভৃতি সম্পর্কে আমরা অবহিত হতে পারি। পূর্বে আলোচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এককথায়, বেশিরভাগ লেখ-র বিষয়বস্তু হল – রাজপ্রশস্তি, শাসন-সংক্রান্ত আদেশ, স্থাপত্য কীর্তি, কোনো মূর্তির প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বর্ণনা, ভূমি ক্রয় বা দান প্রভৃতির লিপিবদ্ধ-করণ। কোনো লেখ-র প্রাপ্তিস্থান সংশ্লিষ্ট শাসকের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেয়। লেখ-র সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হল এই যে, সেই সুদূর অতীতকালে যে ঘটনা লেখতে লিপিবদ্ধ হয়েছে তা আজও অবিকল অবস্থায় রয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও এগুলি নষ্ট হয় না। লেখ-র গুরুত্ব এ করে সাহিত্য ও মুদ্রা থেকে প্রাপ্ত তথ্য লেখ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।ত বেশি যে অন্য কোনো উৎস,বিশেষকরে সাহিত্য ও মুদ্রা থেকে প্রাপ্ত তথ্য লেখ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।


**সর্বশেষে বলা যেতে পারে যে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লেখগুলির ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েই প্রধানত এতক্ষণ আলোচনা করা হল। এখন সামগ্রিকভাবে লেখমালার কিছু সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে। আগেই প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকারি লেখমালা অর্থাৎ প্রশস্তি ও তাম্রশাসনগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট শাসকের জয়গানে মুখর এবং অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই আকর উপাদান হওয়া সত্ত্বেও এগুলি সবসময় একেবারে নির্ভেজাল তথ্য পরিবেশন করে এমন কথা জোর করে বলা যাবে না। এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত লেখর ক্ষেত্রেই কতকগুলি ত্রুটি সহজেই চোখে পড়ে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় বেশিরভাগ লেখতেই তারিখ অনুল্লেখিত।থাকে অথবা তারিখ লেখা সম্বলিত অংশটি ভেঙে যায়। এর ফলে অনেক সময় লেখটির প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় না। সর্বোপরি, লেখমালায় এমন কিছু বক্তব্য উত্থাপিত হয়, যেগুলির প্রকৃত অর্থ অনেকসময় বোঝা যায় না। এ প্রসঙ্গে হরিষেণের এলাহাবাদ প্রশস্তিতে উল্লেখিত 'কন্যোপায়নদান' এবং 'গরুদঙ্ক-স্ববিষয়ভূক্তি শাসন- যাচনা' শব্দগুলির কথা বলা যেতে পারে। বলাবাহুল্য, ঐ শব্দগুলির প্রকৃত অর্থ অনুধাবনের প্রশ্নে ঐতিহাসিক মহলে নানা বাদবিতণ্ডা বিরাজমান।

Post a Comment

0 Comments