প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান


 প্রত্নতান্ত্রিক উপাদান। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করো ?



• উওর:-  সংজ্ঞা:-
সাধারণভাবে বলা যেতে পারে,পুরাতন বস্তুরাজি হল প্রত্নতত্ত্বের বিষয়বস্তু। সুদূর অতীত থেকে প্রায় আধুনিক যুগ  এর গোড়া পর্যন্ত প্রত্নবস্তুর ব্যাপ্তি। এখানে একটা কথা বলে নেওয়া দরকার যে, একশো বছরের বেশি পুরানো যে কোন বস্তু বা স্থাপত্যকে প্রচলিত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্নতত্ত্বের মর্যাদা দেওয়া হয়। অনুসন্ধান ও খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত এবং মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত বস্তু, এমনকি এখনও ব্যবহৃত হয় এমন স্থাপত্যরাজি প্রত্নতত্ত্বের আওতাভুক্ত। উল্লেখ্য, কোনো এক জায়গায় একসঙ্গে অনেক প্রত্নবস্তুর সন্ধান পাওয়া গেলে সেই স্থানটি প্রত্নস্থল বলে গণ্য হয়। ঐ ধরনের প্রত্নস্থল থেকে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের এবং সাধারণভাবে সেই বিশেষ যুগের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য ছাড়াও কৃষিকার্যকালীন সময়ে অথবা বাড়ি তৈরির প্রয়োজনে মাটি খুঁড়তে গিয়েও প্রত্নবস্তুর সন্ধানপ্রাপ্তি আমাদের দেশে বিরল নয়। প্রত্নতাত্ত্বিকের কাজ হল প্রত্নবস্তু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ঐতিহাসিককে সরবরাহ করা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে ইতিহাসের সৌধ। কেননা ইতিহাস আর কিছু নয়—তা হল কেবল মানুষ ও তার কর্মকাণ্ড। ইতিহাসের খোঁজ নিতে হলে অন্যতম হাতিয়ার হল প্রত্নবস্তু।

•প্রত্নতান্ত্রিক উপাদান সম্পর্কে আলোচনা:-

ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই পড়বে প্রত্নতত্ত্বের এক বড় ভূমিকা আছে। কেননা প্রাচীন ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ইতিহাসের মূল স্রোতের ধারা- বাহিকতার গভীরে ঘূর্ণায়মান ঘটনা প্রবাহের সুষ্ঠু রূপায়ণে প্রত্নবস্তু এক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদান বলে স্বীকৃত। প্রত্নতত্ত্বের সাহায্যে যে ইতিহাস রচিত হয় তা বিজ্ঞানভিত্তিক যে বিজ্ঞান আমাদের সুশৃঙ্খলভাবে খননকার্য করতে এবং জনসাধারণের বাস্তব জীবন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে সাহায্য করে তাকে বলা হয় 'প্রত্নবিদ্যা'। উল্লেখ্য যে, সামগ্রিক ইতিহাস সচেতনতা এবং তৎসহ আনুষঙ্গিক জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদ- বিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান, তেজস্ক্রিয় অঙ্গারক পরীক্ষা প্রভৃতির সহযোগিতায় প্রত্নবিদ্যা এখন প্রকৃতপক্ষে একটি বিজ্ঞানসম্মত বিষয় বলে স্বীকৃত) প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে যে সব মাটির তৈরি মূর্তি ও পাত্র, ইমারত, ধাতু ও প্রস্তর নির্মিত বিভিন্ন উপকরণ আবিষ্কৃত হয়, সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট যুগের আর্থ-সামাজিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব। বস্তুত, সেই সুদূর প্রাচীনকালে আমাদের দেশের মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করত, নারীজাতির সামাজিক মর্যাদা কেমন ছিল, কৃষিব্যবস্থা , পরিবহন ব্যবস্থা কেমন ছিল, গ্রামের উত্থান, নগর সভ্যতার বিবর্তন ও পরিণত—এই সমস্ত যাবতীয় বিষয়ের সাক্ষ্য এ পরিচয় মেলে প্রত্নবস্তুগুলিতে / এককথায় প্রত্নবস্তু মানুষের কাজের নীরব সাক্ষী।  এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় হবে যে ভারতের ভাস্কর্যের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঔপনিবেশিক পর্বে। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠা। পরে লর্ড কার্জনের আমলে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এর পুনর্গঠন ও বিবর্ধন ঘটে এবং অধ্যক্ষ স্যার জন মার্শালের নেতৃত্বে এর কাজ গতিশীল হয়। তবে ‘ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের জনক' হিসাবে স্বীকৃত স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এ ব্যাপারে প্রারম্ভিক বেশ কিছু কাজে খ্যাতিলাভ করেছিলেন।

Post a Comment

0 Comments